যকৃতের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত থেকে সিরোসিসের সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক পর্যায়ের সিরোসিস সেরে যায় এবং যকৃত তার কাজও ঠিকমত করতে পারে। তবে মারাত্মক সিরোসিসের ক্ষেত্রে যকৃতে বেশি ক্ষতযুক্ত কলার সৃষ্টি হয় এবং এটি যকৃতের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
সিরোসিস কি
দীর্ঘদিনের ক্ষয় বা সংক্রমণ থেকে যকৃতে ক্ষতযুক্ত কলা দেখা দেয় যা থেকে সিরোসিস হয়। বিভিন্ন রোগ এবং অবস্থার কারণে যকৃতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষয় হতে পারে যা সিরোসিসে পরিণত হয়।
সিরোসিস হয়েছে কি করে বুঝবেন
যকৃতের মারাত্মক ক্ষয় না হওয়া পর্যন্ত সিরোসিসের কোন লক্ষণ ও উপসর্গ সাধারণত: দেখা যায় না।
সাধারণত: সিরোসিসের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো:
- অবসাদ অনুভব করা
- রক্তপাত
- ত্বকে যখন তখন রক্ত জমাট বাধা (Bruising)
- পেটে তরল পদার্থ (Fluid) জমা হওয়া
- ক্ষুধামন্দা
- বমি বমি ভাব
- পা ফুলে যাওয়া (Swelling)
- শরীরের ওজন কমে যাওয়া
কখন ডাক্তার দেখাবেন
উপরোক্ত লক্ষণ ও উপসর্গ যদি বুঝতে পারেন, তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
- রক্তের পরীক্ষা
- কম্পিউটারাইজড টমোপ্রাফী (CT), আল্ট্রাসাউন্ড এবং এম.আর.আই পরীক্ষা
- যকৃত কোষ পরীক্ষা (Liver tissue )
কি ধরণের চিকিৎসা আছে
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের পাশাপাশি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিরোসিস হলে যে ধরনের চিকিৎসা করা হয় তা হলো:
- যে কারনে সিরোসিস হয়েছে তার চিকিৎসা
- সিরোসিসের জটিলতা কমানোর জন্য চিকিৎসা
সিরোসিস হলে জীবন যাপন পদ্ধতি
- লবণযুক্ত খাবার কম খেতে হবে
- সুষম খাদ্য, ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে
- সংক্রমণ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে
- সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখতে হবে
- টীকা বা ভ্যাকসিন নিতে হবে
বিশ্রাম এবং বাড়তি সতর্কতা
- পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেয়া
- হেপাটাইটিস এ, বি, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার টিকা দেয়া
- যে কোন ঔষদ বিশেষত প্যারাসিটামল, এসপিরিন বা জীবাণুনাশক কোন ঔষধ সেবন করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া
- মদ বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা
সিরোসিস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
- সুষম খাদ্য গ্রহণ করা
- শরীরের ওজন ঠিক রাখা
- রাসায়নিক বস্তু দিয়ে কাজ করতে হলে বাড়তি সতর্কতা সতর্কতা অবলম্বন করা। কারণ রাসায়নিক বস্তু শরীরে প্রবেশ করে যকৃতের ক্ষতি করতে পারে
- হেপাটাইটিস যাতে না হয় সেদিকে সতর্ক থাকা। বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ইনজেকশন গ্রহণ করার সময় সতর্ক থাকা এবং নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখা
কি কি কারণে সিরোসিস হয় ?
বেশ কিছু রোগ এবং অবস্থার কারণে সিরোসিস হয় : যেমন-
- নানারকম যকৃতের সংক্রমণ, যেমন: হেপাটাইটিস বি এবং সি, সিস্টোসোমিয়াসিস সংক্রমণ (Schistosomiasis Infection)
- যকৃতে চর্বি জমে যাওয়া
- অতিরিক্ত মদ্য পান
- জিনগত নানা অসুখের কারণে (Cystic Fibrosis, Primary Sclerosing Cholangitis, Galactosemia, Hemochromatosis, Biliary Atresia, Glycogen storage Diseases)
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে যকৃতে সমস্যা হয়
সিরোসিস হলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে ?
সিরোসিস হলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে :
- দেহে রোগ সংক্রমণের হার বেড়ে যায়
- দুর্বলতা অনুভব এবং শরীরে অপুষ্টি দেখা দেয়
- রক্তে দূষিত পদার্থের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এতে রুগী কোমাতে চলে যেতে পারে
- যকৃতে রক্ত প্রবাহে সমস্যা হয়ে উচ্চরক্তচাপ দেখা দিতে পারে
- যকৃতের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি বাড়ে