মাসিক বা পিরিয়ড নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিকভাবেই এই মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হয় আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা বন্ধও হয়ে যায়।

মাসিক (menstruation) কি

নারীদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় প্রভাবকারী একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হচ্ছে মাসিক। ডিম্বাশয়, ডিম্বাশয় হতে বহির্গত হবার নালী (Fallopian tube), জরায়ু, এন্ডোমেট্রিয়াম (Endometrium) এবং যোনির সমন্বয়ে তৈরী প্রজনন অঙ্গ তলপেটে অবস্থিত। মাসিক চক্রের সময় শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনে আছে এসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরোন যা শরীরকে গর্ভবস্থার জন্য তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত, প্রতি ২৮ দিন পরপর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নি:সৃত হয়, যা জরায়ুর দুই পাশের নালী (Fallopian tube) দিয়ে জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করে। গর্ভধারণ না করলে, অনিষিক্ত ডিম্বাণু এবং জরায়ুর আবরণ (এন্ডোমেট্রিয়াম) একত্রে প্রত্যেক চক্রে শরীর থেকে ঝরে যায়। একেই মাসিক তৈরী হওয়া বা রজ:স্রাব (Menstruation) বলা হয়।

মাসিক কখন শুরু এবং শেষ হয়

কি করে বুঝবেন মাসিক সংক্রান্ত সমস্যা হয়েছে

মাসিক সংক্রান্ত সমস্যা হলে সাধারণত: যে উপসর্গগুলো দেখা দেয় :

বিলম্বিত/দেরিতে মাসিক শুরু হওয়া

অনিয়মিত মাসিকের উপসর্গ

ব্যথাযুক্ত মাসিকের উপসর্গ

একে ডিসমেনোরিয়া (Dysmenorrhea) বলে। এক্ষেত্রে  মাসিকের সময় তলপেট তীব্র ব্যথা হয়।

মাসিকের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়

মাসিকের সময়, মাসিকের আগে অথবা মাসিকের পরে নিচের সম্ভাব্য অবস্থাগুলো দেখা যেতে পারে :

১. মাসিক পূর্ব সিনড্রম (Premenstrual Syndrome) :

এর ফলে মাসিকের পূর্বে মহিলাদের নিম্নলিখিত মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনগুলো দেখা যায় :

২. টক্সিক শক সিনড্রোম (Toxic shock syndrome ):

সাধারণত:এই সমস্যা খুব কম হতে দেখা যায়। মাসিকের সময় রক্ত শুষে নেয়ার জন্য যে তুলা ব্যবহার করা হয় তা থেকে এই সমস্যা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে একটি তুলার প্যাড ব্যবহার করা অথবা তুলার রক্ত বা ক্লোরিন অথবা রেয়ন জাতীয় তুলা থেকে এলার্জি জনিত কারণে এই সমস্যা দেখা যায়।

মাসিকের সময় নিজের যত্ন

সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ

মাসিকের সময় সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে যেমন :

ত্বকের যত্নে করণীয়

তলপেট ব্যথা হলে করণীয়

 মাসিক পূর্ব সিনড্রম কি (Premenstrual syndrome)

সাধারণত ২০ বছরের শেষে এবং ৩০ বছরের শুরুতে মাসিক পূর্ব সিনড্রম  দেখা যায়। কোনো মাসে  মাসিক পূর্ব সিনড্রম এর ফলে ঘটিত শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো খুব বেশী ভাবে দেখা যায় এবং কখনও কম দেখা যায়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

মাসিক পূর্ব সিনড্রম-এর ফলে সাধারণত: নিচের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা যায় :

মানসিক ও আচরণগত উপসর্গ
শারীরিক লক্ষণ ও উপসর্গ

কখন ডাক্তার দেখাবেন

উপরোক্ত উপসর্গগুলো মারাত্মক আকারে দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

এক্ষেত্রে তেমন কোন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। মাসিক পূর্ব সিনড্রম-এর উপসর্গগুলো জানার মাধ্যমেই ডাক্তার রোগ নির্ণয় করতে পারে।

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

সমস্যার ধরণ, মাত্রা এবং রুগীর বয়সের উপর চিকিৎসা নির্ভর করে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

জীবন-যাপন পদ্ধতি

মানসিক চাপমুক্ত থাকার জন্য করণীয়

মেনোরেজিয়া (Menorrhagia) কি

মেনোরেজিয়ার ক্ষেত্রে মাসিকের সময় প্রচুর রক্তপাত হয় এবং পেটে ব্যথা হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

মেনোরেজিয়া হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়:

কখন ডাক্তার দেখাবেন

উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

এছাড়া চিকিৎসক প্রয়োজনবোধে অন্যান্য পরীক্ষা যেমন ডি এন্ড সি করতে পারেন।

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

মেনোরেজিয়ার চিকিৎসা কতগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন:

উপরোক্ত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে মেনোরেজিয়ার যেসব চিকিৎসা রয়েছে সেগুলো হলো:

জীবন-যাপন পদ্ধতি

ডিজমেনোরিয়া (Dysmenorrhea) কি

মাসিকের সময় তলপেটে অনেকেরই ব্যথা করে। একে ডিজমেনোরিয়া বলে। অধিকাংশ মহিলাদের মাসিকের পূর্বে এবং মাসিক চলাকালীন সময়ে ব্যথা করে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যা এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis) অথবা জরায়ুরে টিউমারের (Uterine fibroids) কারণে হয়। ছোট বেলায় হলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা লোপ পায় এবং বাচ্চা হবার পর এটি চলে যায়। আবার কারো কারো পরিণত বয়সেও ব্যথা শুরু হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

ডিসমেনোরিয়া হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো দেখা দেয়:

অন্যান্য উপসর্গ

কখন ডাক্তার দেখাবেন

মাসিকের সময় উপরোক্ত লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

মাসিক কতদিন স্থায়ী হয় এবং কি পরিমাণ রক্ত ক্ষয় হয়?

উত্তর. মাসিক চক্র কমপক্ষে ২১ দিন এবং বেশী হলে ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়। প্রথম মাসিক হবার ২-৩ বছর পর্যন্ত তা অনিয়মিত হতে পারে। মাসিক সাধারণত: ২-৭ দিন স্থায়ী হয় এবং হাল্কা, মাঝারি থেকে খুব বেশী পরিমাণে রক্ত নির্গত হয়। সাধারণত: ২০ -৬০ মিলিমিটার রক্ত ক্ষয় হয়। এটি একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয় এবং একই মহিলার ক্ষেত্রে এটি ভিন্নরকম হতে পারে।

অনিয়মিত মাসিক হবার কারণ গুলো কি কি?

সাধারণত: গর্ভবতী মহিলাদের মাসিক হয় না । এছাড়া যেসব মা বাচ্চাদের বুকের দুধ পান করান তাদের সাধারণত: বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ না করা পর্যন্ত  মাসিক হয় না। এছাড়া অনিয়মিত মাসিক হবার কারণ গুলো হলো:

১. এন্ডোক্রাইন কন্ডিশন (Endocrine Conditions):

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মেলিটাস, কুশিং সিনড্রোম (Cushing’s Syndrome), থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সাধারণত ডিম্বস্ফোটনে সমস্যা থাকে ও মাসিক অনিয়মিত হয়।

২. পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (Polycystic Ovarian Syndrome):

এই সমস্যার কারণে ডিম্বাশয় স্ত্রী হরমোণ থেকে পুং হরমোণ বেশী তৈরী করে ও মাসিক অনিয়মিত হয়।

৩. মূত্রগ্রন্থি, পিটুইটারী গ্রন্থি এবং ডিম্বাশয়ে টিউমার হলে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

অন্যান্য কারণ

মাসিক পূর্ব সিনড্রোম হবার কারণ গুলো কি কি?

মাসিক পূর্ব সিনড্রোম হবার সঠিক কারণ সেভাবে না জানা গেলেও নিচের কারণ গুলো এর জন্য দায়ী বলে ধরে নেয়া হয়:

মেনোরেজিয়া হওয়ার কারণ গুলো কি কি?

মেনোরেজিয়া হওয়ার কারণ গুলো হলো:

কাদের মেনোরেজিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশী রয়েছে?

যাদের মেনোরেজিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশী রয়েছে তারা হলেন:

মেনোরেজিয়ার কারণে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে?

মেনোরেজিয়ার কারণে নিচের জটিলতা দেখা দিতে পারে:

ডিজমেনোরিয়ার কারণগুলো কি কি?

ডিজমেনোরিয়া হলে কোন কারণ ছাড়াই মাসিকের সময় ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও ডিজমেনোরিয়ার কারণগুলো হলো:

কাদের ডিজমেনোরিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশী রয়েছে?

যাদের ডিজমেনোরিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশী রয়েছে তারা হলেন:

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *