শরীরে রক্ত বৃদ্ধির খাবারের তালিকা

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মধ্যে রক্ত অন্যতম। যা দেহের সকল অংশে অক্সিজেন এবং সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বয়ে নিয়ে যায়। দেহে রক্তের কোনো উপাদান কম থাকলে সুস্থভাবে বাঁচা সম্ভব নয়। রক্তে আছে লাল রক্তকণিকা, সাদা রক্তকণিকা, এবং প্লেটলেট। লাল রক্ত কোষে আছে বিশেষ কিছু আয়রন কম্পাউন্ড, মেডিকেল টার্মে যাকে বলা হয় হিমোগ্লোবিন।

হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ হলো হৃদপিণ্ড থেকে দেহের সব অঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করা। হিমোগ্লোবিন দেহকোষ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডও সংগ্রহ করে এবং তা পুনরায় ফুসফুসের কাছে পৌঁছে দেয় যাতে তা নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহ থেকে বের হয়ে যেতে পারে। সুতরাং রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে দেহ অক্সিজেনের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে রক্তশুন্যতার মতো রোগও হয়। আর এ থেকে বাঁচার উপায় হলো হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় এমন কিছু খাবার খাওয়া। এখানে এমন ১০টি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যেগুলো নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়বে।

১. মাংস : রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রাণিজ প্রোটিন। সকল ধরনের লাল মাংস; যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং কলিজা আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎসগুলোর একটি। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য জরুরি। মুরগির মাংস লাল মাংস না হলেও তাও দেহকে বিশাল পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করতে পারে।

২. ফল : সবধরনের রসালো সাইট্রাস ফল, যেমন, আম, লেবু এবং কমলা ভিটামিন সি-র সবচেয়ে ভালো উৎস। আর দেহে আয়রন দ্রুত শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন সি সবচেয়ে জরুরি। এর ফলে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের গতিও বাড়ে। স্ট্রবেরি, আপেল, তরমুজ, পেয়ারা এবং বেদানাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।

৩. সামুদ্রিক খাদ্য : সামুদ্রিক খাদ্যে আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে। সুতরাং অ্যানেমিয়া বা রক্তশুন্যতার রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অয়েস্টার, ক্লামস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক খাদ্য রাখতে হবে।

৪. কলাই বা শুটিজাতীয় খাদ্য : সয়াবিন, ছোলা এবং বিনজাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। সয়াবিন বর্তমানে সবজিভোজীদের জনপ্রিয় একটি খাদ্য। এ থেকে সুস্বাদু সব খাবার তৈরি হয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় দ্রুতগতিতে।

৫. পূর্ণশস্যজাতীয় খাদ্য: চাল, গম, বার্লি এবং ওটস রক্তশুন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য চমৎকার আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। এসব খাবার প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেটসও সরবরাহ করে। লাল চাল বিশেষ করে সব বয়সীদের জন্যই আয়রনের একটি সমৃদ্ধ উৎস বলে গণ্য হয়।

৬. সবজি : প্রতিদিন তাজা সবজি খেলে আয়রন ও অন্যান্য খনিজ পুষ্টি এবং নানা ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি মিটবে। আলু, ব্রকলি, টমেটো, কুমড়া এবং বিটরুট আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। এছাড়া স্পিনাক সহ অন্যান্য সবজিও বেশ আয়রন সমৃদ্ধ।

৭. ডিম : ডিম হলো আরেকটি জনপ্রিয় খাদ্য যাতে আছে উচ্চমাত্রার আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডিমের হলুদ কুসুমে আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পুষ্টি এবং ভিটামিন। আর এ কারণেই দুর্বল লোকদেরকে প্রতিদিন সেদ্ধ ডিম খেতে বলা হয়।

৮. শুকনো ফল : কিসমিস, অ্যাপ্রিকট বা খুবানি এবং খেজুরে আছে প্রচুর আয়রন, ভিটামিন এবং আঁশ। এসব খাবার খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও বাড়ে দ্রুতগতিতে।

৯. বাদাম : যে কোনো ধরনের বাদামই মানবদেহের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়। যে কারণে তরুণদেরকে কাজু বাদাম, হিজলি বাদাম, চীনা বাদাম এবং আখরোট খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে দ্রুতগতিতে।

১০. ডার্ক চকোলেট : শিশুদের প্রিয় খাবার ডার্ক চকোলেটেও থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আর এ কারণেই এমনকি ডাক্তাররাও ডার্ক চকোলেট খেতে বলে।

এই সবগুলো খাদ্যই দেহে আয়রনের ঘাটতি মিটিয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুতগতিতে বাড়ায়। সুতরাং নিয়মিতভাবে এই খাবারগুলো খেয়ে দেহে রক্তের পরিমাণ, জীবনী শক্তি এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে থাকুন। 

অনেক সময় আমাদের তাৎক্ষণিক শক্তির দরকার হয়। এমন কয়েকটি খাবারের তালিকা দেয়া হল যা আপনাকে দ্রুততম সময়ে শক্তি সরবরাহ করবে এবং রিফ্রেশ ও পুনরুজ্জীবিত করবে।

কলা

শরীরে এনার্জি বৃদ্ধির খাবারের তালিকা

এতে রয়েছে জটিল কার্বোহাইড্রেট, প্রাকৃতিক সুগার, অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কলা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরে Nor-Epinephrin নামের একটি হরোমান নিঃসরিত হয়। যা তাৎক্ষণিকভাবে দেহের শক্তি বাড়ায়। এছাড়া রক্তচাপও বাড়ায়। ফলে তাৎক্ষণিকভাবেই ক্লান্তি কেটে যায়। একটি কলায় ৮০ থেকে ১২০ কিলোক্যালোরি থাকে।

বাদাম

যখনই আমাদের তাৎক্ষণিক শক্তির দরকার হয় তখনই একমুঠো বাদাম হতে পারে সেরা স্ন্যাকস। বাদামে রয়েছে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, আঁশ এবং ম্যাগনেশিয়াম, ফলিক এসিডের মতো খনিজ পুষ্টি উপাদান। এই পুষ্টি উপাদানগুলো শক্তি ও কোষ উৎপাদনে সহায়ক। তবে প্যাকেটজাত বাদাম খাওয়া উচিত নয়। কেননা তাতে অতিরিক্ত লবণ এবং অস্বাস্থ্যকর তেল থাকে।

ডিম

হালকা নাস্তার জন্য ডিম হতে পারে চমৎকার খাবার। ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। এছাড়া আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি অ্যামাইনো এসিডের সবকটিই আছে এতে। আরও আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন ডি। সারাদিন ধরে শক্তির জোগান দিতে সক্ষম ডিম। সুতরাং হালকা নাস্তার জন্য এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!

অ্যাভোকাডো

এটি একটি সুপার ফুড। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, সি, কে, খনিজ পুষ্টি এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড যা হজম করতেও দীর্ঘ সময় লাগে। এর উচ্চ আঁশসমৃদ্ধ উপাদান আমাদের দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধামুক্ত রাখে। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় খেলে সারাদিন ধরে দেহে চার্জ থাকে।

ডার্ক চকোলেট

চকোলেট উচ্চ শক্তিবর্ধক এবং মুড-বুস্টার। এতে আছে ক্যাফেইন এবং থ্রিওব্রোমিন ও ট্রিপটোফ্যান এর মতো উদ্দীপক উপাদান। যা মনকে রিল্যাক্স করে।

পাতাবহুল সবুজ সবজি

দিনের মধ্যভাগে তাৎক্ষণিকভাবে শক্তির জোগানের জন্য সবজি সবচেয়ে ভালো অপশন। কারণ সবজিতে ক্যালোরি থাকে খুবই কম এবং তা আঁশ ও খনিজ পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। স্পিনাক, বাঁধাকপি এবং গাজর হজমে সময় লাগে অনেক। ফলে পেটও ভরা থাকে দীর্ঘক্ষণ।

পানি

পানি পান করে দেহকে আর্দ্র রাখার মাধ্যমে শক্তির জোগান দেয়া যায় সবচেয়ে সহজে। সবসময় সঙ্গে একটি পানির পাত্র রাখুন। সারা দিন ধরে পানি পান করুন ও দেহকে উজ্জীবিত রাখুন।