পেটের ওপরের দিকে সারা দিন অল্প অল্প ব্যথা থেকে শুরু, হঠাৎ তীব্র ব্যথা আর বদহজম বা খাওয়ার পরে—সবই পেপটিক আলসারের ব্যথা হিসেবে পরিচিত। সাধারণত লোকজন গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে যা বুঝিয়ে থাকেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে পেপটিক আলসার।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘যাঁরা নিয়মিত খাবার গ্রহণ করেন না কিংবা দীর্ঘ সময় উপোস থাকেন, তাঁদের পেপটিক আলসার দেখা দিতে পারে। পেপটিক আলসার যে শুধু পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়, বরং এটি পৌষ্টিকতন্ত্রের যেকোনো অংশেই হতে পারে।
কেন হয়?
প্রধানত পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হওয়ায় এ সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত অ্যাসিড পাকস্থলীর মিউকোসার পর্দা নষ্ট করে পাকস্থলীর সংস্পর্শে আসে এবং প্রদাহ তৈরি করতে পারে। আর হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়াও মিকোসাল পর্দা নষ্ট করে দেয়। অ্যাসিডকে পাকস্থলীর সংস্পর্শে এসে প্রদাহের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া কারও পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে যদি বেশি পরিমাণে অ্যাসিড এবং প্রোটিন পরিপাককারী একধরনের এনজাইম (পেপসিন নামে পরিচিত) নিঃসৃত হতে থাকে, তবে এটি হতে পারে। আবার জন্মগতভাবে কারও পৌষ্টিকতন্ত্রের গঠনগত কাঠামো দুর্বল থাকে, তাহলেও পেপটিক আলসার হতে পারে।
কী কারণে পাকস্থলীতে বেশি অ্যাসিড তৈরি হতে পারে?
ব্যথানাশক ওষুধের কারণে বেশি অ্যাসিড তৈরি হতে পারে। অনিদ্রা, অতিরিক্ত টেনশন, বেশি তেলে ভাজাপোড়া খাবার, ধূমপান ইত্যাদিও বাড়তি অ্যাসিড তৈরি করে।
যা দেখে বুঝবেন
. পেটের উপরিভাগে ব্যথা, জ্বালাপোড়া হওয়া।
. খাওয়ার ঠিক পরপর ব্যথা বাড়ে (গ্যাস্ট্রিক আলসার)।
. খালি পেটে ব্যথা বাড়া (ডিওডেনাল আলসার)।
. ঢেঁকুর ওঠা।
. বদহজম হওয়া।
প্রতিরোধ
নিয়মিত খাবার গ্রহণ, ভাজাপোড়া খাবার পরিহার, দুশ্চিন্তা পরিহার, পর্যাপ্ত ঘুম, ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ অর্থাৎ অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।
চিকিৎসা
পেপটিক আলসারের রোগীরা সাধারণত অ্যান্টাসিড এবং এজাতীয় ওষুধ সেবনে উপকৃত হন।
জীবাণুজনিত কারণে যদি এ রোগ হয়ে থাকে, তবে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তবে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের পরও যদি রোগী ভালো না হন, কিছু খেলে যদি বমি হয়ে যায় অর্থাৎ পৌষ্টিক নালির কোনো অংশ যদি সরু হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে অপারেশন করিয়ে রোগী উপকৃত হতে পারেন।
সময়মতো চিকিৎসা না করালে
. পাকস্থলী ফুটো হয়ে যেতে পারে।
. রক্তবমি হতে পারে।
. কালো পায়খানা হতে পারে।
. রক্তশূন্যতা হতে পারে।
. ক্যানসারও হতে পারে (কদাচিৎ)।
. পৌষ্টিক নালির পথ সরু হওয়া এবং রোগীর বারবার বমি হতে পারে।
ঝাল খেলে কি পেপটিক আলসার হয়?
এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চিকিৎসাবিজ্ঞানে মেলেনি।
বেশি বেশি পানি পান করলে কি পেপটিক আলসার ভালো হয়ে যায়?
বেশি পানি পান করলে এই রোগ হবে না বা ভালো হয়ে যায় এমন কোনো কথা নেই; বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। পরিমিত পানি পান করাই উত্তম।
হঠাৎ বা গভীর রাতে পেটে ব্যথার কারণে রোগীর ঘুম ভেঙে গেলে কী করবেন?
কিছু খেলে ব্যথা কমে যায় বা অ্যান্টাসিড সিরাপ খুব ভালো কাজ দেয়। সমস্যা বেশি হলে হাসপাতালে নিতে হবে।
কাজেই যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি পেপটিক আলসারে ভুগছেন, তাঁদের উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া, পেপটিক আলসারজনিত জটিলতা আগে থেকেই শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া।