যৌনবাহিত রোগ ও প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ
যৌনবাহিত রোগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। বেশির ভাগ যৌনবাহিত রোগেরই প্রথমদিকে কোন উপসর্গ দেখা যায় না ফলে চিকিৎসা দেরি হয়ে যায়। অনেক সময় স্বাস্থ্যবান লোকদেরও সংক্রমণ সর্ম্পকে সচেতনতার অভাবে এ রোগ হতে পারে। তাই যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণ সম্পর্কে প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়া দরকার।
যৌনবাহিত রোগ কি
শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে যৌনবাহিত রোগ হয়। সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যৌনবাহিত রোগ ছড়ায়। এছাড়া রক্ত, বীর্য এবং যোনিপথের নির্গত তরলের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায়। যৌনবাহিত রোগকে সংক্ষেপে এসটিডি (STD) বলা হয়।
যৌনবাহিত রোগ হয়েছে কি করে বুঝবেন
এসটিডি’র বেশ কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু উপসর্গ প্রায়ই ঘটে।
সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ ও উপসর্গ
- অলক্ষিত অবস্থায় থাকতে পারে
- মুখে অথবা যোনিপথে অথবা পায়ুপথে ব্যথাযুক্ত বা ব্যথাহীণ ফোড়া
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা
- পুরুষদের যৌনাঙ্গ থেকে কিছু নি:সরিত হওয়া
- মেয়েদের যোনিপথ থেকে কিছু নি:সরিত হওয়া
- যোনিপথে রক্তপাত
- কুঁচকিতে ব্যথা, বা লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং অনেকসময় জ্বর এবং ফ্লু এর অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়া
- সংক্রমণের কিছু দিন বা তিনমাস পর এর উপসর্গগুলো দেখা যেতে পারে
- ঠান্ডা, অবসাদ অথবা ত্বকে জ্বালাপোড়ার মত উপসর্গ দেখা দেয়া
- চিকিৎসা ছাড়াই লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যেতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে বার বার লক্ষণ ও জটিলতা দেখা দিতে পারে।
রোগের পরবর্তী লক্ষণ ও উপসর্গ
- শরীরের যে কোন স্থানে ব্যথা বা ফোলা
- যোনিপথে বারবার ব্যথা হওয়া
- ত্বকে চুলকানির অনূভূতি হওয়া
- শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া
- অন্ডকোষ লালচে এবং ফুলে উঠা এবং ব্যথা অনুভূত হওয়া
- শ্রোণীতে (Pelvic)ব্যথা হওয়া
- কুঁচকিতে ফোড়া হওয়া
- এইচআইভি’র সংক্রমণ
- বাচ্চা জন্মদানে অক্ষমতা (Infertility)
- সংক্রমণের কারণে স্নায়ু ও হৃদপিন্ডের সংবহননালীতে সমস্যা হওয়া
- ক্যান্সার
কখন ডাক্তার দেখাবেন
- শারীরিক সঙ্গীর যৌনবাহিত (এসটিডি )থাকলে
- যদি মনে হয় যে যৌনবাহিত (এসটিডি) রোগ হয়েছে
- যোনিপথে ফোড়া বা লালচে দানা হলে
- পুরুষের যৌনাঙ্গ এবং মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে কিছু নির্গত হলে
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে
- কুঁচকির লসিকানালী ফুলে গেলে
এছাড়া নিচের বিষয়গুলোর জন্যও ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। যেমন :
- যৌন সক্ষমতা লাভের পর অথবা একুশ বছর বয়সে
- নতুন কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের আগে
- অতীতে এসটিডি হয়েছিল এমন ধারণা হলে
কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
- রক্তের পরীক্ষা
- ঘা বা ক্ষতের ভিতরের তরল পরীক্ষা
- যোনিপথের ক্ষত অথবা নির্গত তরল পরীক্ষা
কি ধরণের চিকিৎসা আছে
- এ্যান্টিবায়োটিক সেবন বা শিরার মাধ্যমে গ্রহণ
- ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশনা মেনে ঔষধ গ্রহণ বা বাদ দিতে হবে
কিভাবে যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়
নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন
- শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সময় যেন দুজনের রক্ত, বীর্য ও তরল একে অপরের সংস্পর্শে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে
- নতুন কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সময় যৌনবাহিত কোন রোগ আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে
- প্রতিবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের আগে কনডম ব্যবহার করতে হবে
- কনডমের সাথে পেট্রোলিয়াম জেলি ক্রিমের মত তৈলাক্ত কিছু ব্যবহার করা যাবে না
- যে কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা ঠিক নয়
- নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সঠিক উপায় খুঁজে বের করতে হবে
- মদ ও মাদক দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে
- ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে হবে
পরীক্ষা
- নিয়মিত যৌনবাহিত রোগের উপস্থিতি পরীক্ষা
টীকা
- ৯-২৬ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (Human Papillomavirus) টীকা
- সদ্যজাত শিশুদের জন্য হেপাটাইটিস (Hepatitis B) বি টীকা
প্রজনন তন্ত্রের সংক্রমণ
প্রজনন বা সন্তান জন্মের সঙ্গে যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সরাসরিভাবে জড়িত তার সংক্রমণকেই প্রজনন তন্ত্রের সংক্রমণ বলা হয়।
লক্ষণ
পুরুষদের ক্ষেত্রে
- প্রস্রাবের রাস্তায় পূঁজ
- পুরুষাঙ্গে ঘা বা ক্ষত
- অন্ডকোষে ব্যাথা ও ফোলা
- ঘন ঘন প্রস্রাব
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা
- কুচকি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা
মহিলাদের ক্ষেত্রে
- যোনিপথে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব
- যৌনাঙ্গে ক্ষত বা ঘা
- যোনিপথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া
- তলপেটের দুইদিকে ব্যথা
- কুচকি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা
- সহবাসের সময় ব্যথা
- কোনো কোন ক্ষেত্রে জ্বর
যেভাবে ছড়ায়
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে
- জীবানুমুক্ত সূচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার না করলে
- আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহণ করলে
- আক্রান্ত মা থেকে সন্তানের মাঝে
- মাসিকের সময় পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার না করলে
- প্রসব বা গর্ভপাতের সময় নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও এই সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
করণীয়
- প্রজনন স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই সবসময় প্রজনন অঙ্গসমূহের যত্ন নিতে হবে।
- যৌনরোগ সন্দেহ হলে দ্রুত নিকট্স্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর পরামর্শ নিতে হবে,অবশ্যই নিজের ও যৌনসঙ্গীর (যদি থাকে) এক সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ খেতে হবে এবং অন্যান্য বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে।
- প্রয়োজনে যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করতে হবে।
এসটিডি কেন হয় ?
ত্রিশের অধিক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং প্যারাসাইটের কারণে যৌনবাহিত রোগ হয়। এইসব জীবাণুগুলো গনোরিয়া, সিফিলিস, আর্থ্রাইটিস, জরায়ু মুখের (Cervitis) সংক্রমণ, তলপেটের প্রজনন অঙ্গের প্রদাহজনিত রোগ (Pelvic Inflammatory disease), মলদ্বার এবং পায়ুপথে ব্যথা, ডায়রিয়া, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ ছড়ায়।
কাদের এসটিডি হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে ?
যাদের এসটিডি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে তারা হলেন-
- যারা অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন
- যারা অল্প বয়স থেকে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন
- যাদের সাম্প্রতিক সময়ে কোন যৌনবাহিত রোগ হয়েছে তাদের সংস্পর্শে এলে
- যাদের একবার যৌনবাহিত কোন রোগ হয়েছে
- যারা একের অধিক ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন
- যারা সূঁই এর মাধ্যমে শিরা পথে মাদক গ্রহণ করেন
- যারা মাদক সেবন করেন
- মহিলাদের
এসটিডির ফলে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে ?
এসটিডির ফলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে যেমন :
- বাত
- চোখের প্রদাহ
- তলপেটে প্রজনন অঙ্গের প্রদাহজনিত রোগ (Pelvic Inflammatory disease)
- সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা
- জরায়ু মুখের ক্যান্সার (Cervical cancer)
- অন্যান্য ক্যান্সার যেমন:HIV ও HPV এর সহযোগী লসিকাগ্রন্থি, ও মলাশয়ের ক্যান্সার
- সুযোগ সন্ধানী জীবাণুর সংক্রমণ থেকে এইচআইভি (Opportunistic infections occurring in advanced HIV)
- হৃদরোগ
- হাঁটতে অথবা ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যা
- ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন বা সমস্যা
- স্মৃতিভ্রষ্ট (Memory loss)
- মা থেকে শিশুরে রোগ সংক্রমণের কারণে ( Maternal-fetal transmission )মারাত্মক জন্মগত ত্রুটি