শিশুর বিকাশ
১ মাস বয়স পর্যন্ত
একটি শিশুর পারা উচিৎঃ
- গালে বা মাথায় হাত বোলালে সেদিকে মাথা ঘোরানো
- উভয় হাত মুখের দিকে আনা
- পরিচিত গলার আওয়াজ বা শব্দ শুনলে সেদিকে ঘোরা
- স্তন চোষা এবং হাত দিয়ে ছোঁয়া
পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
- বাচ্চাকে এমনভাবে ধরুন যাতে চামড়ার সাথে চামড়ার সংস্পর্শ হয় রবং জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ান
- বাচ্চাকে যখন খাড়া করে ধরবেন মাথায় সাপোর্ট দিন
- প্রায়ই বাচ্চাকে মাসাজ্ করুন এবং জড়াজড়ি করে আদর করুন
- সবসময় বাচ্চাকে মৃদুভাবে ধরুন ক্লান্ত বা অশান্তি থাকলেও
- প্রায়ই বুকের দুধ খাওয়ান, অন্ততপক্ষে চারঘন্টা পরপর
- যতবার সম্ভব বাচ্চার সাথে কথা বলুন, কিছু পড়ুন বা গান করুন
- জন্মের ৬ সপ্তাহ পরে বাচ্চাকে নিয়ে স্বাস্থ্য-কর্মীর কাছে যান
যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
- দুর্বল্ভাবে স্তন চোষা বা চুষতে আপত্তি করা
- জোরে আওয়াজ বা উজ্বল আলোয় কোন প্রতিক্রিয়া না হওয়া
- অনেকক্ষণ ধরে কান্না
- বমি ও পায়খানা, যার ফলে শরীরে জলের ভাগ কমে যেতে পারে
৬ মাস বয়সে
শিশুর যা পারা উচিৎ
- উবু হয়ে শুলে মাথা ও বুক উপরে তোলা
- ঝুলছে এমন জিনিষ ধরার চেষ্টা
- বিভিন্ন জিনিষ ধরা এবং ঝাঁকানো
- দুদিকে ফেরা
- সাহায্য নিয়ে বসা
- হাত ও মুখ দিয়ে সব জিনিষ যাচাই করা
- শব্দ এবং মুখের ভাব নকল করতে শুরু করা
- নিজের নাম শুনলে বা পরিচিত মুখ দেখলে প্রতিক্রিয়া হওয়া
পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
- বাচ্চাকে একটা পরিস্কার, নিরাপদ সমতলে রাখুন, যাতে মুক্তভাবে নড়াচড়া করতে পারে এবং জিনিষপত্র ধরতে পারে
- বাচ্চাকে তুলে ধরুন এমনভাবে, যেন সে আশপাশে কী হচ্ছে দেখতে পায়
- দিনে রাত্রে, চাইলেই বুকের দুধ খাওয়ানো চালু রাখুন, তার সাথে অন্য খাবারও দিতে শুরু করুন(৬থেকে ৮ মাস বয়স পর্যন্ত দিনে দুবার, ৮ থেকে ১২ মস পর্যন্ত দিনে তিন থেকে চারবার)।
- যতবার সম্ভব শিশুর সাথে কথা বলুন, পড়ুন বা গান শোনান
যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
- আড়ষ্টতা বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়ায় অসুবিধা
- অনবরত মাথানাড়া (এটা কানে সংক্রমন থেকেও হোতে পারে, চিকিৎসা না হলে বধিরতা হতে পারে)
- শব্দে, পরিচিত মুখ দেখে বা স্তন দেখে কোন প্রতিক্রিয়া না হওয়া বা অল্প হওয়া
- স্তন বা অন্য খাবার ফিরিয়ে দেওয়া
১২ মাস বয়সে
শিশুর যা পারা উচিৎঃ
- সাহায্য ছাড়া বসা
- হামাগুড়ি দেওয়া এবং দাড়িয়ে ওঠা
- কিছু ধরে পা বাড়ানো
- শব্দ এবং কথা নকল করার চেষ্টা করা এবং কিছু বললে বোঝা
- খেলতে এবং হাততালি দিতে ভালবাসা
- কোন শব্দ বা ভঙ্গীর পুনরাবৃত্তি করা
- বুড়ো আঙুল এবং তর্জনী দিয়ে কোন জিনিষ তোলা
- কোন জিনিষ ধরা, যেমন কাপ, চামচ, এবং নিজে নিজে খাওয়ার চেষ্টা করা
পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
- জিনিষের দিকে দেখিয়ে তার নাম বলুন, শিশুর সাথে প্রায়ই খেলুন ও কথা বলুন
- খাবার সময় সবার সাথে মেলামেশায় উৎসাহ দিন
- যদি শিশুর বিকাশ ধীরে হয় বা কোন অসামর্থ্য থাকে, যেসব সামর্থ্য আছে তাতে জোর দিন এবং বাড়তি উদ্দীপনা ও বেশী মেলামেশা করুন
- বাচ্চাকে এক জায়গায় অনেকক্ষণ ছেড়ে রাখবেন না
- দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বাচ্চার আশপাশ যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখুন
- বুকের দুধ খাওয়ানো চালু রাখুন এবং খেয়াল রাখুন যেন পর্যাপ্ত খাবার থাকে। অনেকরকম বাড়ীর খাবারও যেন যথেষ্ট পরিমানে থাকে
- শিশুকে কাপ ও চামচ দিয়ে নিজে খাওয়ার পরীক্ষা করতে দিন
- শিশুর সব টীকাকরণ এবং পরামর্শ মত সব মাইক্রোনিউট্রিয়েণ্ট বিকল্প দেওয়া নিশ্চিত করুন
যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
- অন্যদের শব্দের প্রতিক্রিয়ায় শিশু শব্দ করে না
- নড়াচড়া করা বস্তুর দিকে শিশু তাকায় না
- শিশু অষহিষ্ণু এবং যত্নকারীর প্রতি প্রতিক্রিয়া নেই
- শিশুর ক্ষিদেবোধ নেই বা খাবার ফিরিয়ে দেয়
২ বছর বয়স পর্যন্ত
শিশুর যা পারা উচিৎঃ
- হাটা, ঊঁচুতে চড়া এবং দৌড়োনো
- কোন জিনিষ বা ছবির নাম বললে সেটার দিকে দ্যাখানো (যেমন নাক, কান)
- কয়েকটা শব্দ একসাথে বলা (১৫ মাস বয়স থেকে)
- সাধারণ নির্দেশ পালন করা
- একটা পেন্সিল বা রঙপেন্সিল দিলে আঁকিবুকি করা
- সাধারণ গল্প বা গানে মজা পাওয়া
- অন্যদের ব্যবহার নকল করা
- নিজে নিজে খাওয়া শুরু করা
পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
- বাচ্চার সাথে পড়ুন, গান করুন বা খেলুন
- বাচ্চাকে বিপজ্জনক জিনিষ এড়িয়ে যেতে শেখান
- বাচ্চার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলুন, বাচ্চাদের মত করে কথা বলবেন না
- বুকের দুধ খাওয়ানো চালু রাখুন এবং নিশ্চিত করুন যেন বাচ্চা যথেষ্ট খাবার পায় এবং বাড়ীর খাবারও
- বাচ্চাকে খেতে উৎসাহ দিন, জোর করবেন না
- সাধারণ কিছু নিয়ম এবং জুক্তিসংগত কিছু প্রত্যাশা বলে দিন
- বাচ্চার করা কাজের জন্য প্রশংসা করুন
যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
- অন্যদের প্রতি প্রতিক্রিয়ার অভাব
- হাঁটার সময় ভারসাম্য ঠিক রাখতে অসুবিধা(একজন পরিশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যান)
- আঘাত এবং ব্যবহারের অবোধগম্য রকম পরিবর্তন(বিশেষতঃ যদি শিশু অন্যদের দ্বারা প্রতিপালিত হয়ে থাকে)
- ক্ষিদের অভাব
৩ বছরের সময়
শিশুর যা পারা উচিৎঃ
- সহজে হাঁটা, দৌড়োনো, চড়া, পা ছোঁড়া এবং লাফানো
- সাধারণ বস্তুসমূহ ও ছবি চেনা এবং আঙুল দিয়ে চিহ্নিত করা
- দুই বা তিন শব্দ দিয়ে বাক্য রচনা করা
- নিজের নাম ও বয়স বলা
- রঙের নাম বলা
- সংখ্যা বোঝা
- খেলায় মিছিমিছি জিনিষ ব্যবহার করা
- নিজেকে খাওয়ানো
- ভালবাসা প্রকাশ করা
পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
- বাচ্চার সাথে বই পড়ুন ও দেখুন এবং ছবিগুলো নিয়ে কথা বলুন
- বাচ্চাকে গল্প বলুন এবং ছড়া ও গান শেখান
- শিশুকে তার নিজের আলাদা খাবারের প্লেট বা বাটি দিন
- শিশুকে খেতে উৎসাহ দিন, তার নিজের প্রয়োজন মত সময় নিয়ে
- শিশুকে পোষাক পরতে, হাত ধুতে এবং শৌচাগার ব্যবহার করতে সাহায্য করুন
যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
- খেলাধুলায় উৎসাহের অভাব
- বারবার পড়ে যাওয়া
- ছোট ছোট জিনিষকে সামলাতে অসুবিধা
- সাধারণ কথা বুঝতে না পারা
- বেশ কয়েকটা শব্দ দিয়ে কথা বলতে অসমর্থতা
- খাবারে উৎসাহ না থাকা বা কম থাকা
৫ বছর বয়সে
শিশুর যা পারা উচিৎঃ
- সুসমঞ্জসভাবে চলাফেরা করতে
- সম্পূর্ণ বাক্যে কথাবলতে এবং অনেক বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করতে
- বিপরীত অর্থ বুঝতে(যেমন মোটা এবং পাতলা, লম্বা এবং বেটে)
- অন্য শিশুদের সাথে খেলতে
- সাহায্য ছাড়াই পোষাক পড়তে
- সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে
- পাঁচ থেকে দশটা জিনিষ গুনতে
- নিজের হাত ধুতে
পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
- বাচ্চার কথা শুনুন
- বাচ্চার সাথে প্রায়ই কথাবার্তা বলুন
- যদি বাচ্চা তোতলায়, ধীরে ধীরে কথা বলতে উপদেশ দিন
- গল্প পড়ুন এবং বলুন
- বাচ্চাকে খেলতে এবং খুঁটিয়ে দেখতে উৎসাহ দিন
যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
- খেলার সময়ে বাচ্চা কেমন করে অংশ নেয় লক্ষ্য করুন। যদি সে ভীত হয়, রাগারাগি করে বা মারামারি করে সেটা আবেগজনিত সমস্যা বা নির্যাতনের চিহ্ন হতে পারে