বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ এসিড রিফ্লাক্স নামের এক যন্ত্রণাদায়ক সমস্যায় ভুগছেন। আর যারা এখনো এর মুখোমুখি হননি, তারাও আস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে ধীরে ধীরে এর দিকেই এগোচ্ছেন। এসিড রিফ্লাক্সের কিছু লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কে কিছু ধারণা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
লক্ষণ
এর সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন। তবুও চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
১. বুকে জ্বালাপোড়া হয়। এই অনুভূতি অনেক সময়ই বুক থেকে গলা পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। এর ফলে মুখে টক স্বাদ পাওয়া যায়।
২. কোনো কিছু গিলতে সমস্যা হয়। এমনকি ঢোক গেলার কাজও কষ্টকর হয়ে ওঠে। এ অবস্থাকে বলে ডিসফাজিয়া।
৩. বুকে ব্যথা হয়।
৪. গলায় ব্যথা হতে পারে। মনে হয় গলায় কোনো মাংসপিণ্ড আটকে রয়েছে।
৫. শুকনো কাশি হয়।
৬. টক বমিও হতে পারে।
যদি এ ধরনের লক্ষণ আপনার মধ্যে প্রকাশ পেলে ধরে নিতে পারেন আপনার এসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা রয়েছে। অনেক কারণেই মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। অতি সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে গর্ভাবস্থা, প্রচুর খাওয়া এবং খাওয়ার পর পরই শুয়ে পড়া ইত্যাদি। আবার স্থূলতা এবং ঘুমানোর আগ দিয়ে খেলেও একই সমস্যা হতে পারে। এখানে কিছু চমকপ্রদ কারণ তুলে ধরা হলো। এসব কারণও এসিড রিফ্লাক্স ঘটে থাকে।
সিগারেট
ধূমপানের ক্ষতির কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। অনেকেই জানেন না, সিগারেটের কারণে হার্টবার্নে আক্রান্ত হতে পারেন আপনি। তামাকের নিকোটিন লোয়ার এসোফাজিয়াল স্পিন্সটারকে (এলইএস) অনেকটা নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এতে এসিড রিফ্লাক্স ঘটে। আবার ধূমপানের কারণে মুখে লালা উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতেও সহজে এসিড রিফ্লাক্স ঘটে।
অন্যান্য ওষুধ
যদি আরাম পেতে ক্রমাগত ইবুপ্রোফেন গ্রহণ করেন, তবুও দেখবেন হার্টবার্ন রয়েই গেছে। প্রেসক্রিপশনে দেয়া অন্যান্য ওষুধেও কোনো কাজ হয় না। হাইপারটেনশন রয়েছে এমন ব্যক্তির ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং অ্যাজমার রোগীরা অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্রনকোডাইলেটর গ্রহণ করলে একই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মাছের তেল
মাছের তেল এবং এই তেল সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্টের স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। তবে এদের কিছু বদগুণও আছে। যদি মাছের তেলের কারণে আপনি ক্রমাগ এসিড রিফ্লাক্সের সমস্যায় ভুগতে থাকেন, তবে এখনোই খাওয়া বন্ধ করা উচিত। এখানে তেলপূর্ণ মাছ কোনো সমস্যা নয়। বরং তেলটাই সমস্যা। মাছের তেলে অনেকেরই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনালে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
স্ট্রেস
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এক নীরব ঘাতকের নাম। এর জন্যে যে এসিড রিফ্লাক্স ঘটে তা অনেকেই জানেন না। পাকস্থলীতে এসিড উৎপাদনে উদ্বেগ সরাসরি ভূমিকা রাখে না। তবে জার্নাল অব সাইকোসমাটিক রিসার্চে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, স্ট্রেস ক্রমশ এসিড রিফ্লাক্সের ক্ষেত্রটা প্রস্তুত করতে থাকে। আপনি যখন টেনশন ও পেরেশানিতে থাকে তখন দেহ হার্টবার্নের লক্ষণগুলোর সংকেত গ্রহণে অনেক বেশি সচেতন হয়ে ওঠে। এতে এসোফাগাসে যন্ত্রণার অনুভূতি গ্রহণের ব্যবস্থাটাকে আরো বেশি সচেতন করে তোলে। এতে সহজেই এসিড রিফ্লাক্স ঘটে।
জীবনটাকে পুরোপুরি যন্ত্রণাদায়ক করে দিতে পারে এই এক সমস্যা। আপনি মন চাইলেই যেকোনো খাবার খেতে পারবেন না। ক্রমেই আপনার গভীর ঘুম বাধাগ্রস্ত হবে। আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপন এলোমেলো হতে থাকবে। কাজেই এসিড রিফ্লাক্সে লক্ষণগুলো আগেভাগে চিহ্নিত করতে পারলে সাবধান হয়ে যেতে পারবেন। নইলে সমস্যা গভীরে চলেই গেলে এই ভোগান্তি সহজে মুক্তি মিলবে না।