দাঁত ভালো রাখার উপায়

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

সুস্থ ও সবল দেহের জন্য দাঁত ও মাড়ির তথা মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা একান্ত প্রয়োজন।

টুথব্রাশ

নরম থেকে মধ্যম টুথব্রাশ ব্যবহার করাই উত্তম। লক্ষ রাখবেন যে শলাকাগুলোর মাথা শক্তভাবে মেলানো ও সব শলাকা মিলে একটি পরিষ্কার সমতল ভূমির মতো তৈরি আছে। তবে যত ধরনের ব্রাশই থাকুক না কেন, দাঁত ও মাড়ির ওপর থেকে খাদ্যকণা দূর করে ফেলাই দাঁত ব্রাশ করার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। নিয়মিত ব্যবহূত একটি ব্রাশ সাধারণত দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

কতবার দাঁত ব্রাশ করবেন

প্রতিদিন দুবার দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন—সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে। প্রতিবারই তিন-চার মিনিট দাঁত ব্রাশের পর প্লাক পরিষ্কার হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। যদিও বলা হয় দিনে অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ করতে হয়_রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আর সকালে নাশতার পর। কিন্তু প্রতিবার খাবার খাওয়ার পরই দাঁত ব্রাশ করা দরকার। অনেক কারণেই তা আমাদের অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। সম্ভব না হলে অন্তত প্রতিবার খাওয়ার পর ভালো করে কুলকুচি করে নিন, সকালে ও রাতে দুইবার ব্রাশ করুন।

কীভাবে দাঁত ব্রাশ করবেন

ব্রাশটিকে দাঁতের ৪৫ ডিগ্রি অবস্থানে রেখে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল থেকে শুরু করতে হবে। ব্রাশটিকে দাঁতের গোড়ার দিকে খুব ধীরে অথচ শক্তভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটু ঝাঁকিয়ে সব দাঁতের ফাঁকের কাছে নিতে হবে। এমনভাবে ব্রাশ করতে হবে, যাতে দাঁতের বাইরের অথবা ভেতরের কোনো অংশ বাদ না পড়ে।

ব্রাশ ও পেস্ট ছাড়াও দাঁত পরিষ্কার করা যেতে পারে। যেমন, নিমের ডালকে ব্রাশের মতো ছিলে ব্যবহার করা যায়। লক্ষ রাখতে হবে, দাঁতের ফাঁকে বা দাঁতের গায়ে লেগে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার হয়েছে কি না। দাঁত পরিষ্কার করার পর একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নেওয়া ভালো, সত্যি সত্যি দাঁত পরিষ্কার হয়েছে কি না।

১) প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমানোর আগে টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে ওপর থেকে নিচে এবং নিচ থেকে ওপরের দিকে ভালো করে দাঁত ব্রাশ করে নেবেন এবং দাঁতের ভেতর দিকেও ভালো করে মাজবেন।

২) যেসব জায়গা ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করা সম্ভব নয় সেসব জায়গায় ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করবেন এবং মাড়ির সুরক্ষায় জিহ্বাও পরিষ্কার করে নেবেন। ফ্লসিং হচ্ছে সেই পদ্ধতি যার মাধ্যমে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা বের করা হয়। অনেকেই কাজটি করেন টুথপিক বা খিলালের মাধ্যমে। অনেকে ব্যবহার করেন পিন জাতীয় ধাতব কিছু। বাস্তবে দুটোই ক্ষতিকর। ভালো হলো সুতা দিয়ে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা বের করা। তবে সাধারণ সুতা থেকে ভালো হলো ফ্লসের জন্য বিশেষভাবে তৈরি সুতা ব্যবহার।

৩) বিশেষ বিশেষ খাবার যেমন-পাউরুটি, বিস্কুট, কেক, চকলেট-লজেন্স, আইসক্রিম ইত্যাদি খাওয়ার পর খুব ভালো করে দাঁত পরিষ্কার করে নেবেন। তা না হলে ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৪) ফ্লোরাইড যুক্ত যে কোনো টুথপেস্ট দাঁতের জন্য বেশ উপকারী। দু-তিন মাস পর পর টুথপেস্টের ব্র্যান্ড বদল করে নেয়া ভালো, কারণ বিভিন্ন পেস্টে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে। ফ্লুরাইড দাঁতের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে। ফ্লুরাইড এনামেলের সঙ্গে মিলিত হয়ে এনামেলকে আরও শক্তিশালী করে এবং এসিডের আক্রমণ থেকে দাঁতকে রক্ষা করে।

৫) কয়লা, গুল, টুথ পাউডার, ছাই, মাটি, গাছের ডাল ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে দাঁত ও দাঁতের মাড়ির সুরক্ষা হয় না মোটেই।

৬) ধূমপান করা এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে মুখ ও দাঁতের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও তামাক পাতা ও পান-সুপারিও খাবেন না একেবারেই এতে দাঁত ক্ষয় হয়ে যায় বেশ দ্রুত।

৭) হাঁ করে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করুন, কারণ হাঁ করে ঘুমানোর ফলে মুখ ও দাঁতের রোগ বেড়ে যায়।

৮) ঘুমানোর আগে কখনো বিস্কুট, কেক, চকলেট-লজেন্স খাবেন না কারণ এগুলো খুব সহজে দাঁতে আটকে যায়। আর খেলেও ভালো করে দাঁত পরিষ্কার করে ফেলবেন। নতুবা দাঁতের ক্ষতি হয় অনেক বেশি।

৯) আঁশযুক্ত ও শক্ত খাবার যেমন-গাজর, পেঁয়ারা, আমড়া, ইক্ষু, আনারস, নাশপাতি, আপেল, নারকেল ইত্যাদি দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এগুলো চোয়ালের স্বাভাবিক গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

১০) ভিটামিন সি জাতীয় খাবার দাঁত ও মাড়ির জন্য অত্যন্ত উপকারী। লেবু, আমলকী, কমলা, টমেটো ও বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অন্যান্য ভিটামিন থাকে। তাই দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় খাদ্য তালিকায় রাখুন এইসকল খাবার।

১১) অতিরিক্ত চা-কফি পানও দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। কোমল পানীয়, বোতলজাত জুসও দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো খেলেও সঙ্গে সঙ্গে পানি পান করুন বা কুলি করে নিন।

১২) দাঁতে কোনো ক্ষত ধরা পড়লে, দাঁতে বা মাড়িতে ব্যথা হলে, মাড়ি থেকে রক্ত ঝরলে কিংবা দাঁত শিরশির করলে অবশ্যই দাঁতের চিকিত্সকের কাছে যান। সঠিক সময়ে চিকিত্সা করালে দাঁতের সুরক্ষা নিশ্চিত হতে পারে। বছরে অন্তত দুবার দন্ত চিকিৎসকের কাছে মুখ ও দাঁত পরীক্ষা করানো ভালো। কেননা অনেক সময় দাঁত ও মাড়ির এমন কিছু সমস্যায় আমরা আক্রান্ত হই, যা মারাত্মক পর্যায়ে না পৌঁছালে আমরা টের নাও পেতে পারি।