মানুষের শরীরে হাড়ের সংযোগে প্রায়ই নানা রকমের শব্দ শোনা যায়। টেকনিক্যাল টার্মে এসব শব্দকে বলে ‘ক্রেপিটাস’ যা ল্যাটিন শব্দ ‘র্যাটল’ থেকে এসেছে। র্যাটল শব্দের অর্থ ঘর্ঘর করা। যে কোনো বয়সী মানুষের শরীরের হাড়ে এমন শব্দ হতে পারে। তবে বুড়ো বয়সে শব্দগুলো বেশি শোনা যায়।
কিন্তু এমন শব্দ হওয়ার কারণ কী?
প্রকৃতপক্ষে, দুই হাড়ের সংযোগের শূন্যস্থানে থাকা গ্যাসের বুদবুদই এমন শব্দ সৃষ্টি হওয়ার সাধারণ কারণ। এই বুদবুদ সৃষ্টির কারণ হলো, দুটি হাড়ের শেষ প্রান্তে- যেখানে সংযোগ ঘটে- দুই হাড়কে পৃথক করে ফ্লুইড নামের তরলের একটি স্তর। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিদিনের গতিশীল কর্মকাণ্ডের ফলে দুই হাড় বিচ্ছিন্ন হয় আবার সংযুক্ত হয়। যখন এটি ঘটে তখন সংযোগ স্থানটিতে সাইনোভিয়াল ফ্লুইড নামের তরল (সংযোগে প্রাকৃতিক লুব্রিক্যান্ট) -এর মধ্যে যে গ্যাসের গহ্বর সৃষ্টি হয় সেখানে গ্যাস জমা হয়। এই গ্যাসের মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড। চাপের ফলে সেখানে সৃষ্ট বুদবুদই শব্দ সৃষ্টির কারণ।
এই শব্দ তখনই ভয়ঙ্কর হতে পারে যখন তা অস্বাভাবিক শোনায়, ব্যথা হয় কিংবা ফুলে যায়। তবে এমন অবস্থা খুব কমই হয় বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
বৈজ্ঞানিক বিতর্ক
হাড়ের সংযোগে এই শব্দ কীভাবে সৃষ্টি হয় তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। ১৯৪৭ সালে এক গবেষণায় প্রথমবারের মতো চিকিৎসকরা চেষ্টা করেন এটি বোঝার। তাঁরা তখন মনে করেন যে গ্যাস থেকে বুদবুদ সৃষ্টি হওয়ার কারণেই এই শব্দ সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরবর্তী গবেষণায় দাবি করা হয়, শব্দটি আসলে বুদবুদ বিস্ফোরণের ফলে ঘটে।
এই বৈজ্ঞানিক দ্বন্দ্ব অনেক বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং ২০১৫ সাল পর্যন্ত এর সমাধান হয়নি যখন হাড়ের সংযোগের রিয়েল-টাইম মেডিক্যাল ইমেজগুলো গবেষণার ফলে প্রমাণিত হয় যে বুদ্বুদের গঠনই এমন শব্দ সৃষ্টি করে। একবার শব্দ সৃ্ষ্টির পর পুনরায় গ্যাস জমা হওয়ার জন্য কিছুটা সময় নেয়- এই কারণে দ্রুত হাড় সংযোগ করা যায় না।
কখন উদ্বেগের কারণ হয় না?
কখনো কখনো শরীরের গঠনবিষয়ক কারণে সংযোগে শব্দ সৃষ্টি হয়। যখন হাড়কে ঢেকে রাখা টিসুর ওপর রগ নড়াচড়া করতে থাকে তখন হাড় তার দ্রুত পূর্বের স্থানে ফিরে আসার সময় শব্দ হয়। বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়, কিংবা বসার সময়, আরোহণের সময় সাধারণত হাঁটুতে এ ধরনের শব্দ হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ শব্দ বাড়তে থাকে। যদি এই শব্দের সময় ব্যথা না লাগে তাহলে তা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।
কখন উদ্বেগের কারণ হয়?
হাড়কে ঢেকে থাকা টিসু বা কার্টিলেজ বয়স বাড়ার সাথে অগোছালোভাবে বাড়তে থাকে। ওঠাবসার সময় অমসৃণ টিস্যুগুলো একে অপরের সঙ্গে ঘষা লাগার ফলে শব্দ হয়। আবার হাড়ের সঙ্গে অন্য হাড়কে যুক্ত করতে সাহায্য করে যে লিগামেন্ট নামের সংযোজক কলা, নড়াচড়া করার সময় তা টাইট হয়ে যায় অথবা সংযোগের আস্তরণ ঘুরে যায়। যদি এ সময় হাঁটুতে শব্দ হওয়ার সাথে সাথে ব্যথা ও ফুলে ওঠে তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।