বিশ্বজুড়ে নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন। অন্যান্য রোগের মতো এর সুস্পষ্ট কোনো লক্ষণ নেই। অনেকেই রক্তে গ্লুকোজের অতিমাত্রা কিংবা আরো কিছু বিষয়কে লক্ষণ হিসেবে গণ্য করেন। আসলে এগুলো ভুল ধারণা। তবে কেউ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন কি না তা বোঝার কিছু উপায় আছে।
অনেক ক্ষেত্রে অজানা থাকে
এ রোগের আনাগোনার লক্ষণ নিয়ে সারা দিন পড়ে থাকলেও আপনি কিছুই হয়তো পাবেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ঘটে থাকে। আর এ কারণেই রোগটি বেশি মারাত্মক। আমেরিকার বিখ্যাত মাইয়ো ক্লিনিকের গবেষণায় বলা হয়, এমনও হয় যে বহু বছর ধরে হাইপারটেনশনের উপস্থিতি অজানাই রয়ে যায়। এরই মধ্যে হৃদ্যন্ত্রসহ দেহের অন্যান্য প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিন ধরে মাথা ব্যথা আর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার মতো অসুবিধা উচ্চ রক্তচাপের জানান দিতে পারে। আর হ্যাঁ, বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাতে পারেন এ রোগে আক্রান্ত কি না আপনি। তাই তাঁদের শরণাপন্ন হওয়াটা জরুরি।
হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিস
রক্তবাহী নালিগুলোতে আচমকা রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে অস্বস্তি বোধ হয়। নালির অভ্যন্তরে দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময়ই এই অনুভূতি আর হার্ট অ্যাটাকের অনুভূতি একই মনে হয়। রক্তচাপ বাড়লে বুকে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এমন চরম অবস্থাকে বলা হয় ‘হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিস’। এর স্পষ্ট লক্ষণগুলো এমন—নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, প্রচণ্ড উদ্বেগ, বুকে ব্যথা, কিছু বুঝতে না পারা এবং ঝাপসা দৃষ্টি, অচেতন হয়ে পড়া। কয়েকটি কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক, রক্তচাপসংক্রান্ত সমস্যায় চিকিৎসা না নেওয়া, হার্ট বা কিডনি ফেইলিওর এবং আরো কিছু কারণে এমনটা ঘটে থাকে। রক্তচাপ সীমার বাইরে চলে গেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
যারা বেশি ঝুঁকিতে আছে
বলা যায় প্রত্যেকেই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। পেছনে থাকে অনেকগুলো শর্ত। এসব নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে কিংবা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ঝুঁকি রয়েই যায়। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে যদি বংশ ও পরিবারের কারো এ রোগ থেকে থাকে, বয়স পঞ্চাশের বেশি হলে, সারা দিন অলস পড়ে থাকলে, দেহে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকলে, ধূমপান করলে, অস্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত হলে, ক্রনিক স্ট্রেসে আক্রান্ত হলে। বয়স ও জিনগত কারণে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। স্ট্রেস কমানো থেকে শুরু করে কায়িক শ্রম বাড়ানো জরুরি।