দৈনন্দিন কাজের মাঝেই প্রয়োজনীয় হাঁটাহাঁটির অনেকটা অংশ সেরে নেওয়া যায়। লিফটের বদলে সিঁড়ির ব্যবহার, গাড়ির পরিবর্তে অল্প দূরত্ব হেঁটে যাওয়া, হেঁটে বাজারে যাওয়া ও হেঁটে বাড়ি ফেরা—এ রকম ‘উচিত’ কাজগুলোর কথা কমবেশি সবাই জানেন।

দিনের বেশির ভাগ সময় বসে কাজ করার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। এ ধরনের জীবনযাত্রাকে বলা হয় ‘আসনাশ্রিত’ বা আলসে জীবনধারা। কর্মক্ষম প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যাঁরা প্রতিদিন পাঁচ হাজারের কম পদক্ষেপ ফেলেন, তাঁরা এই আলসে গোছের মানুষের অন্তর্ভুক্ত। দৈনিক সাড়ে সাত হাজারের কম পদক্ষেপ ফেলা মানুষদের বলা হয় শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়। আর ১০ হাজার বা তার বেশিবার পদক্ষেপ ফেলা মানুষেরা শারীরিকভাবে সক্রিয়। যাঁরা এর মাঝামাঝি, অর্থাৎ দৈনিক ৭৫০০-৯৯৯৯টি পদক্ষেপ ফেলেন, তাঁরা হলেন মাঝারি মাত্রায় সক্রিয়। প্রতিদিন অন্তত সাড়ে ১২ হাজার বার পদক্ষেপ ফেলা মানুষেরা শারীরিকভাবে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়।

এই সক্রিয়তার হিসাব দিয়ে হৃদ্‌রোগ ও অন্যান্য ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিকভাবে যিনি যতটা সক্রিয়, তাঁর ঝুঁকির মাত্রা ততটাই কম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকির মাত্রা বাড়ে। হৃদ্‌রোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি শারীরিক সক্রিয়তার সঙ্গে সম্পর্কিত। নারীদের মধ্যে শারীরিকভাবে সক্রিয়দের তুলনায় নিষ্ক্রিয়দের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি দ্বিগুণের বেশি। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে সবচেয়ে সক্রিয়দের তুলনায় নিষ্ক্রিয়দের মধ্যে এ হার তিন গুণের বেশি।

তাই বসে বসে অনেক কাজ করে বা বিশাল প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নিজেকে ‘সক্রিয়’ বা কর্মঠ মনে করা ঠিক হবে না। ব্যায়াম না করলেও অন্তত হাঁটুন। ব্যস্ত সময়ে হাঁটুন, কাজের চাপ না থাকলেও হাঁটুন। রান্নাঘর থেকে কফি তৈরির সামগ্রী নিজেই নিয়ে আসুন হেঁটে। ঘরের অন্যান্য কাজেও নিজে হাঁটুন। টেলিভিশন দেখার সময়ও হাঁটুন। ঘুমের আগে হাঁটুন, জেগে ওঠার পরেও হাঁটুন। অফিসে সহকর্মীকে ফোন না করে বা ডেকে না নিয়ে হেঁটে তাঁর কাছে যান। প্রয়োজনে হেঁটে দুজনে কথা সেরে নিন। এভাবে দৈনন্দিন কাজগুলোর বিন্যাস করে নিন, যাতে ন্যূনতম ১০ হাজার কদম হাঁটা হয় প্রতিটি দিন। আর হ্যাঁ, প্রতিদিন কয় কদম হাঁটলেন, তার হিসাব রাখার জন্য আজকাল বিভিন্ন মোবাইল ফোন অ্যাপ পাওয়া যায়। ডাউনলোড করে নিতে পারেন ওগুলো। এর মাধ্যমে প্রতিদিনকার হিসাব রাখা সহজ হবে। এভাবে নিজেই বুঝতে পারবেন, আপনি কতটা সক্রিয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *