ম্যালেরিয়া

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

বিশেষ এক ধরনের মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া রোগ হয়। বাংলাদেশের পাহাড়ী এলাকায় এই রোগের প্রবণতা বেশী দেখা যায়। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।

ম্যালেরিয়া কি

ম্যালেরিয়া হচ্ছে মশাবাহিত একটি সংক্রামক রোগ। ম্যালেরিয়া হলে বার বার জ্বর এবং কাঁপুনি দেখা দেয়। এটি এমনকি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

ম্যালেরিয়া জীবাণু কিভাবে ছড়ায়

  • স্ত্রী এনোফিলিস (Anopheles) মশার মাধ্যমে ম্যলেরিয়া জীবাণু (Plasmodium Parasite) ছড়ায়।
  • ম্যালেরিয়া আক্রান্ত কোন লোককে যখন মশা কামড়ায় তখন এটি নিজের মধ্যে এক ধরণের জীবাণু (Gametocytes) গ্রহণ করে।
  • এই মশা যখন অন্য কাউকে কামড়ায় তখন তার রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায় এবং সে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়।
  • গর্ভবতী মহিলা যদি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় তাহলে তার গর্ভের সন্তানের মধ্যেও এর জীবাণু ছড়ায়।
  • ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে রক্ত দিলে।

ম্যালেরিয়া হয়েছে কি করে বুঝবেন

ম্যালেরিয়া হলে  সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয় :

  • মাঝারি থেকে তীব্র কাপুনি দিয়ে শীত/ঠান্ডা লাগা
  • তীব্র জ্বর
  • অত্যধিক ঘাম হওয়া ( শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে)
  • ক্লান্তি,অবসাদ অনুভাব করা

অন্যান্য লক্ষণ

  • মাথা ব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • বমি
  • ডায়রিয়া

কখন ডাক্তার দেখাবেন

ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় থাকা অবস্থায় জ্বর আসলে অথবা সেইসব এলাকা থেকে ঘুরে আসার ১ বছরের মধ্যে জ্বর দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

রোগের উপসর্গ এবং ভ্রমণ ইতিহাস জেনে ডাক্তার ৩-১২ ঘন্টার ব্যবধানে দুইবার রক্ত পরীক্ষা করতে বলবেন ।

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মুখে বা শিরাপথে ঔষধ গ্রহণ। যেমন-ক্লোরোকুইন ( Chioroquine), কুইনিন সালফেট (Quinine sulfate), হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন ( Hydroxy Chloroquine), মেফ্লোকুইন    ( Mcfloquine), সালফাডক্সিন (Sulfadoxine) এবং পাইরিমেথামাইন (Pyramethamine) এর যে কোন একটি অথবা কয়েকটি ঔষধ সেবন করতে হবে।
  • ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া কোন ঔষধ কতদিন মুখে সেবন বা শিরাপথে নিতে হবে এবং কতদিন চিকিৎসা করতে হবে তা কতগুলো বিষয়ের প্রতি নির্ভর করে।

যেমন :

  • ম্যালেরিয়ার ধরণ
  • কোথায় সংক্রমণ হয়েছে
  • রুগীর বয়স
  • চিকিৎসা শুরু হবার সময় কতখানি অসুস্থ ছিল
  • রোগের তীব্রতার উপর

বাড়তি সতর্কতা

  • মশারী ব্যবহার করা
  • মশা নিবারক যেমন: কয়েল,মশক প্রতিরোধক ক্রীম, স্প্রে ব্যবহার করা

ম্যালেরিয়া কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

  • মশারী ব্যবহার করা এবং ঘরের দেয়ালে  কীটনাশক ঔষধ ছিটানো।
  • বাড়ির আশেপাশে কোন ঝোপ জঙ্গল থাকলে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার দুই-তিন মাস আগে      ডাক্তারের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজন হলে ঔষধ খেতে হবে।
  • বেড়াতে যাবার এক/দুই সপ্তাহ আগে এবং সেখান থেকে ফেরার চার সপ্তার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিষেধক ঔষধ সেবন করতে হবে।

ম্যালেরিয়া কেন হয় ?

মশাবাহিত বিশেষ এক ধরণের জীবাণু ( Plasmodium) দ্বারা সংক্রমণের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া হয়ে থাকে।

কাদের ম্যালেরিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে ?

যাদের ম্যালেরিয়া হবার ঝুঁকি বেশি রয়েছে তারা হলেন :

  • যারা ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় থাকেন
  • অল্প বয়স্ক এবং শিশুরা
  • যারা ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় বেড়াতে যান
  • গর্ভবতী মার যদি ম্যালেরিয়া হয় তবে তার গর্ভস্থ শিশুরও ম্যালেরিয়া হতে পারে

ম্যালেরিয়া হলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে ?

ম্যালেরিয়ার সবচেয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেয় P. Falciparum  দ্বারা সংক্রমণের মাধ্যমে। জটিলতাগুলো হলো:

  • রক্তশূণ্যতা
  • সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া (Cerebral Malaria)
  • শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা
  • পানিশূন্যতা
  • যকৃত বা লিভারের অকার্যকারিতা
  • কিডনির অকার্যকারিতা