ভিটামিন হলো এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা মানবশরীরের জন্য অপরিহার্য। শারীরিক বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ এবং সুরক্ষায় ভিটামিনেয ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিনসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো ভিটামিন ই। লিভার, যকৃত, অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন ই সহায়তা করে। স্নায়ু ও মাংসপেশীর কার্যক্ষমতা বজায় রাখতেও ভিটামিন ই সাহায্য করে। ভিটামিন ই অত্যন্ত উন্নত মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভিটামিন ই সহায়তা করে। ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা ও চুল পড়া রোধে ভিটামিন ই-এর ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন ই অনেক খাবারেই পাওয়া যায়। জেনে নিন সর্বোচ্চ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ কয়েকটি খাবার সম্পর্কে –
১) সূর্যমুখীর বীজ : সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভিটামিন ই। প্রতি ১০০ গ্রাম সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ৩৬.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। এই বীজ থেকে যে তেল তৈরি করা হয় তা সাধারণত সালাদ, স্যুপ বা গার্নিশে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অন্যান্য রান্নাতেও সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করা যায়। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই, রক্তচাপ ও হৃদরোগীরা অনায়াসে তা খেতে পারেন।
২) লাল মরিচের গুঁড়া : জেনে একটু অবাকই হতে পারেন, সর্বোচ্চ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে লাল মরিচের গুঁড়া! প্রতি ১০০ গ্রাম লাল মরিচের গুঁড়ায় রয়েছে ২৯.৮৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। আমাদের রোজকার খাবারে আমরা মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করে থাকি। তাই আমাদের শরীরে ভিটামিন ই-এর অভাব সচরাচর ঘটে না।
৩) কাঠ বাদাম : আমন্ড বা কাঠবাদাম ভিটামিন ই-এর জন্য বেশি জনপ্রিয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠবাদামে রয়েছে ২৬.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। দাম বেশি বলে কাঠবাদাম খাবার হিসেবে খুব বেশি প্রচলিত নয়। সাধারণত ক্ষীর, পায়েস, মিষ্টি, সন্দেশ, হালুয়াসহ অন্যান্য খাবার তৈরিতে অনুষঙ্গিক উপকরণ হিসেবে কাঠবাদাম ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কাঠবাদামের দুধ ও মাখনও ভিটামিন ই-এর ভালো উত্স।
৪) পেস্তা বাদাম : কাঠবাদামের পরেই রয়েছে পাইন নাট বা পেস্তা বাদাম। প্রতি ১০০ গ্রাম পেস্তা বাদামে রয়েছে ৯.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। কাঠবাদামের মতোই পেস্তা বাদামও আমাদের দেশে বিভিন্ন খাবার তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৫) চীনা বাদাম : চীনা বাদাম খেতে পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুব কমই আছেন! বাদাম ভাজা বেশ মুখরোচক একটি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম চীনা বাদামে রয়েছে ৬.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। চীনাবাদাম নানা খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চীনাবাদামের মাখনও বেশ উপকারী।
৬) ভেষজ: ভেষজের মধ্য বেসিল ও অরিগানোতে রয়েছে সর্বোচ্চ ভিটামিন ই। প্রতি ১০০ গ্রাম বেসিল ও অরিগানোতে রয়েছে ৭.৪৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। পাস্তা, পিজা, সালাদ ও স্যান্ডউইচ তৈরির উপকরণ হিসেবে বেসিল এবং অরিগানো ব্যবহার করা হয়।
৭) শুকনো এপ্রিকট : এপ্রিকটকে বলা হয় খাদ্যআঁশ ও নানা ভিটামিনের উত্কৃষ্ট উত্স। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো এপ্রিকটে রয়েছে ৪.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
৮) জলপাইয়ের আচার : ভিটামিন ই-এর একটি উত্কৃষ্ট উত্স হিসেবে গণ্য করা হয় কাঁচা জলপাইকে। তবে কাঁচা জলপাইয়ের আচার হলো ভিটামিন ই-এর একটি ভালো উত্স। প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ের আচারে রয়েছে ৩.৮১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
৯) পালং শাক : রান্না করা পালং শাক আয়রন, ক্যালসিয়াম ও খনিজ পদার্থের আধার হিসেবে পরিগণিত হয়। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই-ও। প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা পালং শাকে রয়েছে ৩.৫৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
১০) কচুর মূল : আয়রন ও ক্যালসিয়ামের সর্বোত্কৃষ্ট উত্স হলো কচুর মূল। এটি আমাদের দেশে অতি সহজলভ্য একটি খাবার। আলুর বিকল্প হিসেবেও কচুর মূল খাওয়া যায়। সর্বোচ্চ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকার দশ নম্বরে রয়েছে কচুর মূল। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুর মূলে রয়েছে ২.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।