পানিতে ডুবে যাওয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা
পানিতে ডুবে যাওয়ার পরে নাক-মুখ দিয়ে পানি ফুসফুসে প্রবেশ করার ফলে রোগীর শ্বাসরোধ হয়ে আসে আর প্রচুর পানি খেয়ে পেট ফুলে যায়৷ ২-৩ মিনিট মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে ক্ষতি হয় এবং ৪-৬ মিনিট শ্বাস বন্ধ থাকলে সাধারণত মৃত্যু ঘটে ।
প্রাথমিক চিকিৎসা
- যদি কেউ পানিতে ডুবে যায় তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে হবে৷ তবে পানিতে ডোবা রোগীকে উদ্ধারের জন্য পারদর্শী লোকের প্রয়োজন৷ নতুবা উদ্ধারকারীর জীবন বিপন্ন হতে পারে
- যার শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে তাকে পানি থেকে তোলার আগেই (যদি সম্ভব হয়) নাক ও মুখে কিছু থাকলে তা দ্রুত আঙুল দিয়ে পরিষ্কার করে মুখে মুখ রেখে শ্বাস দিতে হবে
- যদি মুখে মুখে শ্বাসক্রিয়া চালু না করা যায় অর্থাত্ বাতাস যদি ফুসফুসে প্রবেশ না করে তবে বুঝতে হবে শ্বাসনালী ও ফুসফুস সম্পূর্ণ পানিতে ভর্তি৷ সে অবস্থায় রোগীকে ডাঙ্গায় তুলে এনে ফুসফুস থেকে পানি বের করতে হবে৷ প্রথমে রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে দিতে হবে৷ তারপর পেট ধরে উচু করতে হবে যাতে মাথা, বুক নিচের দিকে থাকে৷ পিঠে আস্তে আস্তে চাপড় দিতে হবে৷ এতে পাকস্থলী, শ্বাসনালী ও ফুসফুসের পানি বের হয়ে আসবে৷ পানি বের করার জন্য বেশি সময় নেয়া যাবে না৷ তারপর কৃত্রিম পদ্ধতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস আরম্ভ হয়
- সম্ভব হলে ভেজা কাপড় খুলে দিতে হবে৷ হাত-পা ঠাণ্ডা হলে ম্যাসেজ বা গরম সেঁক দিতে হবে
- রোগীকে আরামে শুইয়ে রাখতে হবে, পায়ের দিক কিছু ওপরে ও মাথা কিছু নিচের দিকে রাখলে ভালো হয়
- অবস্থা ভালো থাকলে কুসুম গরম দুধ, চা ইত্যাদি খেতে দেয়া যায়
- অবস্থা ভালো না হলে নিকটস্থ হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যেতে হবে৷ প্রয়োজনে অক্সিজেন দিতে হবে
- ঔষুধ সেবন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
কারো শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে কি করবেন?
যার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে, তার আয়ু মাত্র ৪ মিনিট! যা করবার তাড়াতাড়ি করুন।
সাধারণতঃ এইসব কারণে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়ঃ
• গলায় কিছু আটকে গেলে
• অজ্ঞান লোকের গলায় তার জিহবা বা পুরু শ্লেশ্মা আটকে গেলে
• পানিতে ডুবলে।
• ধোঁয়ায় দম আটকে গেলে বা বিষক্রিয়া হলে
• মাথায় বা বুকে জোরে আঘাত লাগ্লে
• হার্ট এ্যাটাক হলে
শ্বাস নিতে না পারলে মানুষ ৪ মিনিটের মধ্যেই মারা যায়।
নিচের কাজগুলো যত তাড়াতাড়ি পারেন, করুনঃ
প্রথম ধাপঃ
মুখে বা গলায় কিছু আটকে গেলে তাড়াতাড়ি করে সেটা বের করে দিন। জিহবাটা সামনের দিকে টানুন। গলায় শ্লেষ্মা থাকলে তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করে বের করে দেবার চেষ্টা করুন।
দ্বিতীয় ধাপঃ
তাড়াতাড়ি লোকটিকে চিত করে শুইয়ে দিন; তার মাথা একেবারে পেছন দিকে বাকিয়ে দিন, আর চোয়ালটা সামনের দিকে টেনে তুলুন।
তৃতীয় ধাপঃ
লোকটির নাকের ফুটো দুটো আপনার আঙুল দিয়ে চেপে বন্ধ করে দিন; তার মুখ বড় করে হা করিয়ে দিন; তার মুখ আপনার মুখ দিয়ে ঢেকে তার ফুস্ফুসের ভেতর জোরে ফুঁ দিন যাতে তার বুকটা উঁচু হয়ে ওঠে। একটু থেমে- বাতাসটা বের হয়ে আসতে দিয়ে- আবার ফুঁ দিন। মিনিটে প্রায় ১৫ বার কএরে এইরকম বারবার করুন।
ছোট বাচ্চাদের বেলায় মিনিটে প্রায় ২৫ বার করে খুব আস্তে ফুঁ দেবেন। যতক্ষণ না রোগী নিজে নিজে শ্বাস নিচ্ছে অথবা সে যে মারা গেছে এটা নিঃসন্দেহে বোঝা যাচ্ছে, মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস দেয়া চালিয়ে যান।কখনো কখনো এক ঘণ্টা বা তারো বেশী সময় ধরে এটা করে যেতে হয়।