নবজাতকের র‌্যাশ

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

শিশু জন্মের পর ত্বকে অনেক রকমের সমস্য দেখা দিতে পারে। নবজাতকের র‌্যাশ শিশুদের একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা । বিভিন্ন কারণে শিশুর শরীরে এই র‌্যাশ হতে পারে।

নবজাতকের ত্বকের লালচে দাগ কি

নবজাতকের ত্বকে প্রায় সব ধরণের র‌্যাশ বা লালচে দাগ হতে পারে। তবে বেশিরভাগ  র‌্যাশ ততোটা ক্ষকিকর নয় এবং এমনিতেই সেরে যায়।

নবজাতকের ত্বকে র‌্যাশের ধরণ

নবজাতকের ত্বকে যে লালচে দাগ হয় তা কয়েক ধরণের হয়। যেমনঃ

ব্রণের মত দাগ:

মায়ের গর্ভের হরমোন জনিত কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এতে কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না।

লাল লাল দানা:

এটা অনেকটা মশার কামড়ের মত দেখায়। কোন চিকিৎসা ছাড়াই কয়েক দিন বা সপ্তাহ পর এটি এমনিতেই সেরে যায়।

সাদা সাদা খোঁসার মত চামড়া ওঠা:

শিশু যদি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটা দেরীতে জন্মায় তাহলে এই সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ত্বক নরম ও কোমল থাকে।

জন্ডিস (Jaundice):

বিলিরুবিন বৃদ্ধির কারণে শিশুর ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে জন্ডিস হয়। বিলিরুবিন বেশি বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য জনিত অনেক সমস্যা দেখা দেয়। বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে শিশুর শরীরে আলোর থেরাপী (Photo Therapy) দিতে হতে পারে।

ধূসর দাগ:

যেসব বাচ্চাদের ত্বক কালো তাদের শরীরে মসৃণ ধূসর-নীল (Gray-blue) রংয়ের বড় বা ছোট দাগ দেখা যায়। এগুলো ক্ষতিকর নয় এবং শিশুদের যখন স্কুলে যাবার বয়স হয় তখন এগুলো এমনিতেই চলে যায়।

শিশুর খুশকি (Seborrhoea):

১-২ মাস বয়সে হয়। তেলতেলে হলুদাভ খুশকি মাথার চামড়ায় দেখা যায়। মুখের ত্বকে, কানের পিছনে, ঘাড়ে এমনকি বগলেও হতে পারে।

জন্মের প্রথম কয়েকমাসে শিশুর র‌্যাশ

একজিমা (Eczema):

শিশুর বুকে, বাহুতে, পায়ে, চেহারায়, কনুইতে এবং হাঁটুর পিছনে লালচে র‌্যাশ হতে পারে। শুস্ক, স্পর্শ কাতর ত্বকের জন্য এবং এলার্জির কারণে এই সমস্য দেখা দেয়। এর চিকিৎসার জন্য নিচের বিষয়গুলো মেনে চলতে হয়।

  • ক্ষারহীন সাবান ব্যবহার
  • শিশুর কাপড় চোপড় হাল্কা ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং অন্য কোন রাসায়নিক দিয়ে পরিষ্কার  করা যাবেনা
  • একাজিমা না সারলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্টেরয়েত ক্রিম ব্যবহার করতে হতে পারে

ঘামাচি (Prickly heat):

শিশুর ঘাড়ে, বগলে, শিশুর নিতম্ব এবং দুই পায়ের মাঝখানে অর্থাৎ যেসব জায়গা খুব ঘামে সেখানে ছোট ফোলার মত (Bumps) হয়। এজন্য শরীরের এ সমস্ত জায়গাগুলো শুকনা রাখতে হয় এবং শিশুকে ঢিলেঢালা পোশাক পড়াতে হয়।

ছত্রাকজনিত সংক্রমণ ( Fungal infection):

এটি বিভিন্নভাবে দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে জিহ্বায় সাদা সরের মত আস্তরণ পড়ে যাকে থ্রাশ ( thrush) বলা হয়।  শিশুর নিতম্ব এবং দুই পায়ের মাঝখানে  লালচে র‌্যাশ এবং ছোট  ফোলার মত (Bumps) দেখা যায়।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

শিশুর ত্বকে বা শরীরের কোন অংশে  র‌্যাশ বা দাগ দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

র‌্যাশ সাধারণত: এমনিতেই সেরে যায়। র‌্যাশ অতিরিক্ত হলে র‌্যাশ বা সংক্রমণের ধরণ, মাত্রা এবং শিশুর বয়স অনুসারে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ছত্রাক প্রতিরোধক জেল, তরল ঔষধ অথবা ক্রীম ব্যবহার করা।

নবজাতক শিশুর র‌্যাশ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

  • শিশুকে সবসময় পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
  • শিশু যেন ঘেমে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে
  • শিশুকে গোসল করানোর সময় মৃদু সাবান ব্যবহার করতে হবে

শিশুর ত্বকে র‌্যাশ কখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়?

যদি বেশির ভাগ র‌্যাশ অতটা মারাত্মক নয়, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করে। যেমনঃ

  • পানি বা তরলযুক্ত ফুসকুড়ি থেকে মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে
  • জীবানুর সংক্রমণের কারণে পুরো শরীরে ছোট লালচে বা বেগুনী (Purplish) দাগ দেখা দিতে পারে।

কখন র‌্যাশ হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে?

শিশুর জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে র‌্যাশের সাথে নিম্নের উপসর্গ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে:

  • শিশুর জ্বর হলে
  • শিশু কিছু না খেতে চাইলে
  • শিশু বেশী ঘুমালে
  • শিশুর কাশি হলে