ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘেমেয়াদি স্বাস্থ্যগত সমস্যা; কার্যকরভাবে যার চিকিৎসা করাতে হয়। ডায়াবেটিসের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হলো প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা। আরো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিকভাবে আরো সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া থেকে রেহাই পাওয়া যায় বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিয়মিতভাবে আঁশ সমৃদ্ধ খাবার, শাক-সবজি, শীম, পূর্ণশস্যজাতীয় খাবার এবং বাদাম খেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্তও হওয়ার ঝুঁকি ব্যাপকভাবে কমে আসে। এখানে এমন ১৩টি খাবারের কথা বলা হলো যেগুলো নিয়মিতভাবে খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
১. চিয়া বীজ
চিয়া বীজ হলো এমন একটি বিস্ময়কর খাবার যা আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আঁশ এবং উচ্চ মাত্রার প্রোটিন এবং ম্যাঙ্গানিজ। চিয়া বীজ ছোট্ট একটি প্যাকেজের মধ্যেই প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। নিয়মিতভাবে চিয়া বীজ খেলে রক্তচাপ এবং প্রদাহ কমে। এছাড়া চিয়া বীজে যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় তাও কোলেস্টেরল কমাতে বেশ কার্যকর। যা হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়। চিয়া বীজ ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখেও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
২. দই
এতে ক্যালোরি কম থাকে। ফলে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে দেয় না।
৩. শিম
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের শুকনো শিম খাওয়া উচিৎ। অতিরিক্ত সোডিয়ামযুক্ত ক্যানজাত শিম নয়। শিমে গ্লুকোজ উপাদান কম থাকে। ফলে এটি যে কোনো শ্বেতসার জাতীয় খাবারের চেয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অনেক বেশি। শিমে উচ্চহারে আঁশ থাকে। ফলে তা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমিয়ে রাখে।
৪. কলাই বা শুঁটি
যে খাবারে কলাই বা শুঁটি জাতীয় খাবার বেশি থাকে তা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখতে পারে। এছাড়া রক্তে গ্লূকোজের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরও পড়ুন: ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চাইলে মাংস খাওয়া কমান
৫. বেরি
বেরিজাতীয় ফলগুলোতেও গ্লুকোজ উপাদান কম থাকে। বেরিতে আছে ফ্রু্ক্টোজ যা হজমের জন্য ইনসুলিন দরকার হয় না। মাকুই বেরিতে আছে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা টিউমার এবং স্তন ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিনে আছে শক্তিশালী প্রদাগরোধী উপাদান যা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি দেহে ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া এটি সুগার এবং কার্বোহাইড্রেটস ভেঙ্গে গ্লুকোজ তৈরি করতে সহায়ক। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।
৬. কুমড়ো বীজ
কুমড়ো বীজ খেলে অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং অতিভোজনের আকুতি কমে আসে। আর ইনসুলিনের প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেহের সক্ষমতা বাড়ায়।
৭. লাল চাল
সাদা চালের ভাত রক্তে সুগারর মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং লাল চালের ভাত খান। এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অন্তত ১৫% কমে আসবে। আর ভাত খাওয়া বাদ দিয়ে অন্য কোনো শস্যজাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে অন্তত ৩৫%।
৮. অ্যাসপ্যারাগাস
রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় অ্যাসপ্যারাগাস। এটি ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। যা দেহকে গ্লুকোজ হজমে সহায়তা করবে। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে অ্যাসপ্যারাগাস খেলে।
৯. আপেল
আপেল, ব্লুবেরি এবং আঙ্গুর যে স্বাস্থ্যকর তা সবারই জানা। এসব খাবার নিয়মিতভাবে পরিমিত পরিমাণে খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। যারা প্রতিদিন আপেল খান তাদের টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসে ২৭%।
১০. বার্লি
এটি প্রাচীন একটি শস্য। মানুষেরা প্রথম যেসব শস্যের চাষ শুরু করে বার্লি তার মধ্যে একটি। এটি সহজেই দ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার। যা লাল চালের চেয়েও ভালো। বার্লি যে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখে এবং কোলোস্টেরলের মাত্রা কমায় তা হয়তো অনেকেই জানেন না।
১১. খেজুর
নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়বে না।
১২. আখরোট
সপ্তাহে অন্তত দুই দিন নিয়মিতভাবে আখরোট খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি একেবারে কমে আসবে।
১৩. ফ্ল্যাক্স সীড
গত প্রায় ১০০ বছর ধরে ফ্ল্যাক্স সীড খাদ্য এবং ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি এখন এই গ্রহের একটি শক্তিশালী খাদ্য। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এই খাদ্য। অন্যদিকে, এটি রক্তের সুগারের মাত্রা কমাতে এবং দেহকে ইনসুলিন ব্যবহারে আরো ভালোভাবে সক্ষম করে তোলে।