ঠোঁটকাটা-তালুকাঁটা

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

ঠোঁট কাটা-তালু কাটা জন্মগত ত্রুটি গুলোর মধ্যে অন্যতম। আমাদের দেশে অনেক শিশু্‌ই ঠোঁট কাটা-তালু কাটা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিছু নির্দেশনা মেনে চললে এবং সু্স্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন পদ্ধতি বজায় রাখলে এ ধরণের শিশু জন্ম দেয়ার ঝুঁকি কিছুটা হলেও কম থাকে।

ঠোঁট কাটা-তালু কাঁটা কি

ঠোঁটের উপরের অংশ এবং মুখের ভিতরের তালু কাটাকেই ঠোঁট কাটা-তালু কাটা বলে। গর্ভস্থ শিশুর মুখের গড়ন (Facial Structure) অসম্পূর্ণভাবে গঠিত হলে এই  ধরণের সমস্যা হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

জন্মের সময়ই শিশুর ঠোঁট কাটা-তালু কাটা ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয় সেগুলো হলো:

  • মুখের একপাশে বা উভয় পাশেই এই সমস্যা দেখা দেয়
  • ঠোঁট কাটার ক্ষেত্রে ঠোঁটে ছোট খাঁজ কাটার মত হয় অথবা ঠোঁট থেকে মাঢ়ীর উপরের অংশ পর্যন্ত কাটা বিস্তৃত হয়
  • তালু কাটা নাকের নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়
  • তালুকাটার ক্ষেত্রে  তালুর মাংস পেশী খুব কম কাটা থাকে

কি ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন  হতে পারে

  • গর্ভস্থ শিশুর আল্ট্রাসনোগ্রাম
  • জীনগত পরীক্ষা (Genetic Testing)
  • এমনিওসেনটেসিস পরীক্ষা (Amniocentesis)

 কি ধরনের চিকিৎসা আছে

ঠোঁট কাটা-তালু কাটার চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে সার্জারী এবং থেরাপী। সার্জারীর মাধ্যমে জন্মগত ত্রুটি গুলো ঠিক করা হয় এবং থেরাপীর মাধ্যমে অন্যান্য সমস্যা থাকলে তা দূর করা হয়। ঠোঁট কাটা-তালু কাটা চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো শিশুর মুখের স্বাভাবিক গড়ন লাভ করা, শিশুর নি:শ্বাস নেয়া, খাওয়া, কথা বলা এবং শোনার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা থাকলে তা দূর করা ।

কিভাবে ঠোঁট কাটা-তালু কাঁটা প্রতিরোধ করা যায়

একটি শিশুর ঠোঁট কাটা-তালু কাটা সমস্যা হলে পরবর্তী শিশুটিরও এরকম সমস্যা হতে পারে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যায় না তবে এক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা মেনে চলা যায়। যেমন:

  • অল্প ও বেশী বয়সে গর্ভধারণ না করা
  • গর্ভধারনের আগে এবং ১ম ৩ মাস ফলিক এসিড সেবন করা
  • ধূমপান এবং অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকা
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ না খাওয়া

ঠোঁট কাটা-তালু কাটা কেন হয়?

সাধারণত ঠোঁট এবং তালুর কলা (Tissue) একসাথে মিশে এবং  ঠোঁট এবং তালু গড়ে উঠে। তবে এ দুটির গঠন একসাথে না হলে বা আংশিক হলে ঠোঁট কাটা-তালু কাটার সমস্যা হয়ে থাকে। এছাড়া আরো কিছু কারণে ঠোঁট কাটা-তালু কাটার সমস্য হয়। যেমন:

  • জীনগত কারণে
  • পারিপাশ্বিক কারণে যেমন: কিছু ঔষধের কারণে, শিরাপথে মাদক সেবন করলে, ধূমপান, মদপান করলে

কাদের ঠোঁট কাটা-তালু কাটা সহ শিশুর জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে?

যাদের ঠোঁট কাটা-তালু কাটা সহ শিশুর জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে তারা হলেন:

  • যাদের বংশে কারো ঠোঁট কাটা-তালু কাটার সমস্যা আছে
  • পুরুষদের ঠোঁট কাটার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এর সাথে তালু কাটা থাকতে পারে নাও পারে
  • মহিলাদের মধ্যে তালু কাঁটার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়
  • গর্ভধারণের প্রাথমিক দিকে সিগারেট,মদ এবং অন্যান্য মাদক দ্রব্য সেবনে গর্ভে শিশুর ঠোঁট কাটা-তালু কাটা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে
  • মা যদি অস্বাভাবিক মোটা হন, মায়ের যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে গর্ভের শিশুর ঠোঁট কাটা-তালু কাটা হওয়ার সম্ভাবনা  থাকে

ঠোঁট কাটা-তালু কাটা হলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে?

ঠোঁট কাটা-তালু কাটার কারণে নিচের জটিলতা গুলো দেখা দিতে পারে:

  • তালু কাটার ফলে বাচ্চারা মায়ের দুধ খেতে পারে না এবং নাক দিয়ে খাবার বেরিয়ে আসে
  • তালু কাটার ফলে বাচ্চাদের কানে সংক্রমণ হয় এবং পরবর্তীতে কানে শুনতেও সমস্যা হয়
  • ঠোঁট কাটা যদি উপরের মাঢ়ী পর্যন্ত বিস্তৃত হয় তাহলে দাঁতের অনেক সমস্যা দেখা দেয়
  • ঠোঁট কাটা-তালু কাটার ফলে কথা বলতে/ শব্দ উচ্চারণে সমস্যা হয়
  • ঠোঁট কাটা-তালু কাটা সমস্যার ফলে বাচ্চারা সামাজিক, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে

ঠোঁট কাটা-তালু কাটা ঠিক করার জন্য কি ধরণের সার্জারী আছে?

সাধারণত সার্জারী নিচের বিন্যাস অনুযায়ী করা হয়ে থাকে:

  • ঠোঁট কাটা-তালু কাটা সারানো (Cleft lip repair) । এটি ১০ মাস বয়স থেকে ৩ মাস বয়সের মধ্যে করা হয়।
  • তালু কাটা সারানো (Cleft palate repair) । এটি ৬ মাস বয়স থেকে ১৮ মাস বয়সের মধ্যে করা হয়।
  • ফলোআপ সার্জারী (Follow-up Surgeries) । এটি ২ বছর বয়স থেকে ১৯ বছরের মধ্যে করা হয়।

এছাড়াও নিচের সার্জারী গুলো করা হয়:

  • দাঁতের হাড় জোড়া দেয়া বা সংযোজন (Teethridge Bone Grafting)
  • চোয়ালের সার্জারী (Jaw Surgery)

ঠোঁট কাটা-তালু কাটা ঠিক করার জন্য কি ধরণের থেরাপী আছে?

ঠোঁট কাটা-তালু কাটা ঠিক করার জন্য থেরাপীর মধ্যে রয়েছে:

  • ত্রুটিপূর্ণ বাচনভঙ্গির চিকিৎসা (Speech Therapy
  • শ্রবণ শক্তির চিকিৎসা (Hearing Therapy)
  • মানসিক চিকিৎসা (Psychological Therapy)