মস্তিষ্কে রেবিস ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়ে তখনই রেবিসের লক্ষণগুলো দেখা দিতে থাকে। প্রথম দু-তিন দিনের মধ্যে গা ম্যাজ ম্যাজ করা, মাথা ব্যথা, অবসাদ, বমিভাব, খিদের অভাব, জ্বর ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
অনেক ক্ষেত্রে দংশন স্থানে চুলকায়, ব্যথা করে, ঝিন ঝিন করে। এর পরের পর্যায়ে রোগী শব্দ, ঠান্ডা বাতাস সহ্য করতে পারে না। রোগী কোনও প্রকার তরল পদার্থ গিলতে পারে না। রোগীর মানসিক অস্থিরতা এবং কখনও কখনও ঝিমিয়ে পড়ার ভাব দেখা যায়। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তীব্র খিঁচুনি ও পক্ষাঘাতে রোগীর মৃত্যু হয়।
জলাতঙ্কের লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে গেলে সে রোগীকে বাঁচানোর কোনও টিকা বা ওষুধ চিকিৎসাবিজ্ঞানের জানা নেই। কিন্তু এ রোগ প্রতিরোধের টিকা (Anti-rabies vaccine-ARV) মানুষের করায়ত্ত। কুকুর বা বন্যপ্রাণী কামড়ালে (যে ক্ষেত্রে সম্ভব) জেনে নিতে হবে প্রাণীটি রেবিস আক্রান্ত ছিল কি না? রেবিস আক্রান্ত হলে দ্রুত ভ্যাকসিন নিতে হবে। আর প্রাণীটি রেবিস আক্রান্ত কি না জানা সম্ভব না হলে (রাস্তার কুকুর বা বন্যপ্রাণী কামড়ালে) অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ভ্যাকসিন নিতে হবে। কোন কুকুরটি রেবিসে আক্রান্ত তা জানার জন্য রেবিস আক্রান্ত কুকুরের রোগ লক্ষণ জানা জরুরি।
রেবিস আক্রান্ত কুকুরের লক্ষণ
রেবিস আক্রান্ত কুকুরের দু’ ধরনের লক্ষণ দেখা যায়
১) উন্মত্ত আচরণ, অস্বাভাবিক ভাবভঙ্গি, উদ্দেশ্য ছাড়াই ছুটে বেড়ানো, বিকৃত ক্ষুধা, বিকৃত আওয়াজ করা, শরীরে কাঁপুনি, বিনা প্ররোচনায় কামড়ানো, মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, ডাক কর্কশ হওয়া, পক্ষাঘাতে পায়ের ভারসাম্য হারানো, অবশেষে শ্বাসকষ্ট হয়ে মৃত্যু।
২) মৌন আচরণ : নিস্তেজ হয়ে ঝিমোতে থাকা, বিকৃত স্বরে ধীরে ধীরে ডাকা, মানুষের চোখের আড়ালে থাকা, শরীরে কাঁপুনি ও পক্ষাঘাত দেখা দেওয়া এবং সব শেষে মুত্যৃ। সাধারণত রোগ লক্ষণ প্রকাশের সাত দিনের মধ্যেই কুকুরটি মারা যায়। যদি কামড়ানোর ১০ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকাশিত না হয়, তবে কুকুরটি রেবিসে আক্রান্ত নয় বলে মনে করতে হবে। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই এবং ভ্যাকসিনও নিতে হবে না। কিন্তু যদি কামড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বেশি হয় অথবা হাত, মাথা, মুখ ও ঘাড়ে কামড়ায় তবে সাথে সাথে ভ্যাকসিন নেওয়া শুরু করে ১০ দিন পর কুকুরটি সুস্থ থাকলে ভ্যাকসিন বন্ধ করা যেতে পারে। জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন প্রথম আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর।