জন্ডিস
ত্বক, মিউকাস মেমেব্রেণ এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়াকে জন্ডিস বলে। সাধারণত: আমাদের শরীরে প্রতিদিন ১% পুরনো লোহিত কণিকার স্থলে নতুন লোহিত রক্ত কণিকা স্থানান্তরিত হয়। পুরনো লোহিত রক্ত কণিকা গুলো বিলিরুবিন উৎপন্ন করে, যা পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কোন কারণে শরীর থেকে বিলিরুবিন না বের হতে পারলে এই অধিক বিলিরুবিনের জন্য জন্ডিস হয়। বিলিরুবিনের কারণে ত্বক, চোখ ইত্যাদি হলুদ হয়ে যায়। জন্ডিসের কারণে অন্যান্য সমস্যাও দেখা দেয়।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
শিশু এবং বড়দের ত্বক, চোখ ইত্যাদি হলুদ হয়ে গেলো জন্ডিস হয়েছে বলে মনে করতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
কি ধরণের পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
- রক্ত পরীক্ষা
- যকৃতের কার্যকারিতা এবং কোলেস্টরল পরীক্ষা
- প্রোথোম্বিন টাইম (Prothrombin time)
- পেটের আল্ট্রাসাউন্ড
- রক্তের পরীক্ষা
- প্রস্রাব পরীক্ষা
- যকৃতের বায়োপসি
কি ধরণের চিকিৎসা আছে
রোগের ধরণ, মাত্রা, রুগীর বয়সের উপর জন্ডিসের চিকিৎসা নির্ভর করে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ঔষধ সেবন এবং অন্যান্য বিষয় মেনে চলতে হবে
- শিশুদের ফিজিওলজিকাল জন্ডিসের (Physiological Jaundice) ক্ষেত্রে কিছু দিনের লাইট থেরাপী দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে
- নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে বিলিরুবিনের মাত্রা মারাত্মক আকার ধারণ করলে রক্ত পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে
জন্ডিস রোগীর বাড়ীতে যত্ন
- চিকিৎসার আগে জন্ডিস হবার কারণ খুঁজে বের করতে হবে
- কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং তাজা ফল খেতে হবে
- রান্না সহ বিভিন্ন কাজে টিউবয়েলের পানি ব্যবহার করতে হবে
- হাতের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে
- রুগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
- খাবার-দাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে
- স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে
জন্ডিস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
- যকৃতের কার্যকারিতার সাথে জন্ডিসের কারণ জড়িত তাই যকৃত এবং এর কার্যকারিতা যেন ভালো থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে
- সুষম খাবার খেতে হবে, অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- মাদক, ধূমপান, শিরাপথে নেশা দ্রব্য নেওয়া পরিহার করতে হবে
- জন্ডিসের টীকা নিতে হবে
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
জন্ডিস হবার কারণ গুলো কি কি?
উত্তর.জন্ডিস হবার কারণ গুলো হলো:
- যকৃতের কার্যক্ষমতার উপর চাপ পড়লে
- যকৃত অকেজো হয়ে গেলে
- পিত্ত থেকে বিলিরুবিন অন্ত্রে যেতে না পারলে
শিশুদের ক্ষেত্রে
- পিত্তনালী চিকন থাকা বা তৈরী না হওয়া (Biliary Atresia)
- জন্ম থেকেই বিলিরুবিনের তৈরী ও নি:সরণে সমস্যা থাকলে
বড়দের ক্ষেত্রে
- হেপাটাইটিস এ, বি,সি, ডি, ই এর জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে
- মদ্য পান করার কারণে যৃকতে সমস্যা হল্যে
- সংক্রমণ, টিউমার বা পিত্তপাথুরীর জন্য পিত্তনালী বন্ধ বা সংকীর্ণ হয়ে গেলে
- জন্ম থেকেই বিলিরুবিন প্রক্রিয়ায় সমস্যা থাকলে
- মাদক সেবনের কারনে হেপাটাইটিস হলে
- রক্ত অতিরিক্ত ভাঙ্গার কারণে রক্তশূণ্যতা হলে (Hemolytic anemia)