চোখে আঘাত
চোখে আঘাত বলতে বুঝায় অক্ষিগোলক ও তার পার্শ্ববর্তী স্থানে আঘাত। চোখের আঘাত বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে। চোখে আঘাত লাগার কারণে দৃষ্টিশক্তি চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই চোখে আঘাত লাগলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করাতে হবে।
চোখে আঘাতের ফলাফল ও চিকিৎসা
চোখে আঘাতের ফলে যা হতে পারে তা হচ্ছে-
১. চোখের পাতায় ক্ষত
সাধারণত ধারালো কোন জিনিষ দিয়ে কেটে বা ছিলে গেলে চোখের পাতায় ক্ষত হয়।
চোখের পাতায় ক্ষত হলে
- চোখ দিয়ে রক্ত পড়ে
- পাতায় ব্যাথা হয়, চোখের পাতা ফুলে যায়
- চোখ লাল হয়
চিকিৎসা
- চোখে অন্য কোন আঘাত আছে কিনা দেখতে হবে।
- জীবাণুমুক্ত প্যাড বা ব্যান্ডেজ দিয়ে বিশ্রাম রাখতে হবে ।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
- চোখের ক্ষত বেশী হলে ব্যান্ডেজ করে চক্ষু চিকিৎসকের নিকট রেফার করতে হবে।
২. কর্ণিয়াতে ঘষা লাগা
অসাবধানতাবশত, দুর্ঘটনার কারণে বা খেলাধুলার সময় চোখে/ কর্নিয়াতে আঘাত লেগে থাকে।
কর্নিয়াতে ঘষা লাগলে
- কর্নিয়ার উপর ঘা হয় এবং দাগ পড়ে
প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা না পড়লে দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এমনকি চোখ অন্ধও হতে পারে
লক্ষণ
- রোগী তাকাতে পারে না
- আলো সহ্য হয় না
- চোখে ব্যাথা হয়, পানি পড়ে এবং ঝাপসা দেখা যায়।
চিকিৎসা
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবাণুনাশক চোখের মলম দিয়ে প্যাড ব্যান্ডেজ করে ২৪ ঘন্টা চোখ বেধে রাখতে হবে।
- ২৪ ঘন্টা পর আরাম না হলে হাসপাতালে রেফার করতে হবে।
- মনির উপর সাদা অংশে দাগ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে রেফার করতে হবে।
৩. কর্ণিয়াতে ঘা
আমাদের দেশে কর্ণিয়ায় ঘা হওয়ার অন্যতম কারণ চোখে আঘাত যেমন-
ক) কর্ণিয়ার উপর লোহা, কাঠ, ধান ইত্যাদির আঘাত।
খ) চোখের উপর ভোতা বা ধারালো অস্ত্রের আঘাত।
গ) রাসায়নিক বস্তু চোখে দেয়া।
ঘ) চোখে জীবাণু দ্বারা সংক্রামন করা-ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি।
লক্ষণ
- চোখে ভীষণ ব্যাথা
- চোখ লাল হওয়া
- চোখের পাতা ফুলে যাওয়া
- চোখের পাতা নড়ানো
- আলো সহ্য না হাওয়া
- চোখ থেকে পানি পড়া
- দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া
- চোখের মনিতে সাদা আবরণ পড়া
চিকিৎসা
- কর্ণিয়ায় ঘা সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবাণুনাশক ড্রপ ২/৩ ঘন্টা পর পর দিতে হবে
- মুখে এন্ট্রিবায়োটিক খাওয়াতে হবে এবং যথা শীঘ্র চক্ষু চিকিৎসকের নিকট রেফার করতে হবে।
- ক্ষতের কারণ যথা- ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট চিকিৎসা দিতে হবে
- জীবাণুনাশক ড্রপ ছাড়া চোখে অন্য কিছু দেয়া যাবে না। প্যাড-ব্যান্ডেজ দিতে হবে।
৪. চোখে আঘাত লেগে চোখ ছিদ্র হওয়া
তীক্ষ্ণ বা ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত লেগে অক্ষিগোলক কেটে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। এমন ক্ষেত্রে প্রায়ই চোখের ভিট্টাসহিউমার, আইরিশ ইত্যাদি বেরিয়ে আসতে পারে।
লক্ষণ
- সাধারণত এক চোখে হয়
- চোখে ব্যথা হয়
দৃষ্টি শক্তি একেবারে কমে যায় বা থাকে না
চিকিৎসা
- জীবাণু মুক্ত প্যাড ব্যাণ্ডেজ দিয়ে চোখ বেধে দিতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মুখে এন্ট্রিবায়োটিক দিতে হবে।
- চোখে ড্রপ বা মলম দেওয়া যাবে না।
- যথাশীঘ্র সম্ভব চক্ষু চিকিৎসকের নিকট রেফার করতে হবে।
চোখে আঘাত প্রতিরোধের উপায়
- ভোঁতা বা ধারাল বস্তু দিয়ে কাজ করার সময় খুব সাবধান হতে হবে। প্রয়োজনে চক্ষু-সিল্ড বা চশমা ব্যবহার করতে হবে।
- রাসায়নিক পদার্থ নাড়াচাড়া করার সময় খুব সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে চোখের ভেতরে না ঢুকে। হাতে লাগলে হাত সঙ্গে সঙ্গে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- ওয়েল্ডিং করার সময় বিশেষ ধরনের গাঢ় কালো চক্ষু-সিল্ড ব্যবহার করতে হবে।
- গ্লাসের কারখানা বা ইটের ভাটায় কর্মরতদের প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- চোখে আঘাত বা খোঁচা লাগতে পারে এমন কাজ/খেলা থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে।
- ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যেখানে খেলাধুলা করে সেখানকার আশপাশের গাছপালার নিচু ডাল কেটে ফেলতে হবে, যাতে তাদের চোখে কোনো আঘাত না লাগে।
- চোখে আঘাত বা লাগলে খোঁচা লাগলে সংগে সংগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
চোখের পাতায় ক্ষত হলে কি হয়?
- চোখ দিয়ে রক্ত পড়ে
- পাতায় ব্যাথা হয় চোখের পাতা ফুলে যায়
- চোখ লাল হয়
কর্ণিয়ার ঘায়ের লক্ষণ গুলো কি কি?
- চোখে ভীষণ ব্যাথা
- চোখ লাল হওয়া
- চোখের পাতা ফুলে যাওয়া
- চোখের পাতা নড়ানো
- আলো সহ্য না হাওয়া
- চোখ থেকে পানি পড়া
- দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া
- চোখের মনিতে সাদা আবরণ পড়া
কর্ণিয়ায় ঘা হলে কি করতে হবে?
- কর্ণিয়ায় ঘা সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবাণুনাশক ড্রপ ২/৩ ঘন্টা পর পর দিতে হবে
- মুখে এন্ট্রিবায়োটিক খাওয়াতে হবেএবং যথা শীঘ্র চক্ষু চিকিৎসকের নিকট রেফার করতে হবে।
- ক্ষতের কারণ যথা- ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট চিকিৎসা দিতে হবে
- জীবাণুনাশক ড্রপ ছাড়া চোখে অন্য কিছু দেয়া যাবে না। প্যাড-ব্যান্ডেজ দিতে হবে
চোখে আঘাত লেগে ছিদ্র হলে কি ধরনের সমস্যা হয়?
- চোখে ব্যথা হয়
- দৃষ্টি শক্তি একেবারে কমে যায় বা থাকে না
চোখে আঘাত বা খোঁচা লাগলে কি করতে হবে?
চোখে আঘাত বা খোঁচা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।