ঘামাচি

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

ঘামাচি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। গরমের সময় এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় ছোট-বড় সবারই এই সমস্যা হতে পারে।

ঘামাচি কি

সাধারণত ঘামাচি তখনই হয় যখন ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়, ঘাম বের হয় না এবং ত্বকের নিচে ঘাম আটকে যায়। এর ফলে ত্বকের উপরিভাগে ফুসকুড়ি এবং লাল দানার মত দেখা যায়। কিছু কিছু ঘামাচি খুব চুলকায়। ঘামাচি সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়। তবে ঘামাচি সারানোর জন্য ত্বক সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে এবং ঘাম শুকাতে হবে।

ঘামাচি কোথায় হয়

  • বড়দের ক্ষেত্রে ত্বকের যেসব জায়গায় ভাঁজ পড়ে এবং কাপড়ের ঘষা (Friction) লাগে সেসব স্থানে ঘামাচি হয়।
  • ছোটদের ঘাড়ে, কাঁধে, বুকে, বগলে, কনুইয়ের ভাঁজে এবং কুঁচকিতে ঘামাচি হয়।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

ঘামাচি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং মারাত্মক আকার ধারণ করে তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া নিচের লক্ষণ গুলো দেখা দিলেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে :

  • ব্যথা বেড়ে যাওয়া, আক্রান্ত স্থান ফুলে যাওয়া এবং লালচে হয়ে যাওয়া
  • আক্রান্ত স্থান হতে পুঁজ বের হওয়া
  • বগল, ঘাড় এবং কুঁচকির লসিকা নালী (Lymph nodes) ফুলে যাওয়া
  • কাঁপুনী দিয়ে জ্বর আসা

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

ঘামাচির জন্য তেমন কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়েনা। ঘামাচি যে হয়েছে তা ডাক্তার চোখে দেখেই বুঝতে পারেন।

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

  • ঘাম কমানো বা এড়ানোর জন্য ঠান্ডাযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। এছাড়া হালকা সুতি জামা পরিধান করতে হবে
  • ঘামাচি মারাত্মক আকার ধারণ করলে ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী রুগীর বয়সের উপর ভিত্তি করে টপিকাল থেরাপী দিতে হবে। (Topical therapy)। টপিকাল থেরাপীর মধ্যে রয়েছে:
  • ক্যালামিন লোশন (Calamine Lotion) লাগানো
  • এ্যানহিড্রাউস ল্যানোলিন (Anhydrous lanolin) লাগানো
  • টপিকাল স্টেরয়েড (Topical steroids) লাগানো

জীবন-যাপন পদ্ধতি

  • গরমে হালকা, টিলেঢালা পোশাক পরতে হবে
  • শীতে অতিরিক্ত পোশাক পরা থেকে বিরত থাকতে হবে
  • ঠান্ডা-ছায়াযুক্ত স্থানে বেশি থাকতে হবে। ঘুমানোর  জায়গা ঠান্ডা এবং বাতাস চলাচল করতে পারে এমন হতে হবে
  • গোসলের পর ভেজা শরীর তোয়ালে দিয়ে না মুছে বাতাসে শুকাতে হবে
  • মলম ও ক্রিম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে
  • ঠান্ডা পানিতে শুষ্ক নয় (Non-drying) এমন সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে

কি কি কারণে ঘামাচি হয় ?

ঘামাচি হওয়ার কারণগুলো হল :

  • গরম, আর্দ্র আবহাওয়া
  • কঠোর ব্যায়াম ও পরিশ্রমের ফলে ঘাম হলে
  • ঘাম সহজে শুকায়না এমন পোশাক পড়লে
  • মূত্রাশয়ের সমস্যার ঔষধ-বেথানিকল (Bethanechol), উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ- ক্লোনিডিন (Clonidine),  ব্রণের ঔষধ-আইসোট্রিটিনয়েন (Isotretinoin), ডক্সিরুডিসিন (Doxorudicin ) এবং কেমোথেরাপির ঔষধ গ্রহণ করলে
  • অতিরিক্ত গরমে বা তাপে, শীতকালে খুব বেশি পোশাক পরলে
  • অতিরিক্ত ক্রিম এবং মলম ব্যবহার করলে

কাদের ঘামাচি হবার ঝুঁকি বেশি রয়েছে ?

যাদের ঘামাচি হবার ঝুঁকি বেশি রয়েছে তারা হলেন :

  • নবজাতক শিশুরা
  • গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে বসবাসকারীরা
  • কঠোর শারীরিক ব্যায়াম করেন যারা

ঘামাচির ফলে কি ধরণের জটিলতা দেখা  দিতে পারে?

ঘামাচির ফলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে :

  • ঘামাচির ফলে অনেক সময় জীবাণুর সংক্রমণ হয়, ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং চুলকায়।
  • অতিরিক্ত গরমে ঘর্ম গ্রন্থি বন্ধ হয়ে শরীরকে পরিশ্রান্ত করে তোলে। এর ফলে নিম্ন রক্তচাপ (Low blood Pressure), অবসাদ, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা হয় এবং নাড়ীর স্পন্দন  দ্রুত হয়। এর ফলে হিটস্ট্রোকও হতে পারে।