গলা ব্যথা

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

গলার ব্যথা একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসুস্থ হবার পূর্ব লক্ষন হিসেব গলা ব্যথা করে।

গলা ব্যথা কি

গলা ব্যথার অপর নাম হলো ফ্যারিঞ্জাইটিস (Pharyngitis)। সাধারণত ঠান্ডা এবং ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) এর মত জীবাণুর সংক্রমণের মাধ্যমে গলার এই সমস্যা হয়। গলা ব্যথার ক্ষেত্রে গলায় শুষ্ক চুলকানি হয় এবং খাবার গিলতে  ও ঢোক গিলতে সমস্যা হয়।

গলা ব্যথার লক্ষণ ও উপসর্গ

গলা ব্যথা হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়:

  • গলা খসখসে হয়, চুলকায় এবং ফুলে যায়
  • শ্বাস নেয়ার সময়, কথা বলার সময় এবং ঢোক গিলার সময় ব্যথা অনুভূত হয়
  • ঠান্ডার কারণে গলা ব্যথা হলে এর পাশাপাশি কাশি, জ্বর, সর্দি, হাঁচি  এবং শরীরে ব্যথা হয়

গলা ব্যথা মারাত্মক আকার ধারণ করলে, টনসিল ফুলে যায়। এক্ষেত্রে সাধারণত: নিচের উপসর্গগুলো দেখা যায় :

  • খাবার গিলতে বা ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া
  • গলা ব্যথা বার বার হওয়া
  • বমি হওয়া
  • ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া
  • মাথা ব্যথা করা
  • মরাত্মক গলা ব্যথা করা
  • টনসিল ফুলে লালচে হওয়া
  • ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের ১০১ ফারেনহাইট (৩৮.৩ সি) জ্বর এবং বড়দের ১০৩ ফারেনহাইট (৩৯.৪ সি) জ্বর হওয়া
  • গলায় অথবা টনসিলে পুঁজ হওয়া

কখন ডাক্তার দেখাবেন

উপরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তরের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

  • শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
  • গলা পরীক্ষা (throat culture)

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই গলা ব্যথা সাধারণত এক সপ্তাহ অথবা কিছুদিন পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। রোগের ধরণ, মাত্রা ও রুগীর বয়স অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশা অনুসারে ঔষধ সেবন করতে হবে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

  • তরল খাবার গ্রহণ
  • পর্যাপ্ত ও বাড়তি ঘুম
  • এ্যান্টিবায়োটিক সেবন

জীবন-যাপন পদ্ধতি

  • প্রচুর তরল খাবার যেমন-পানি, ফলের রস, গরম চা  গ্রহণ করতে হবে।
  • এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিলিয়ে তা দিয়ে গড়গড়া করতে হবে
  • এক গ্লাস খুব গরম পানিতে মধু এবং লেবু মিশিয়ে তা ঠান্ডা করে তারপর পান করতে হবে
  • উষ্ণ, আরামদায়, স্যাঁতসেঁতে নয় এরকম ঘরে থাকতে হবে
  • কথা কম বলতে হবে
  • সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে বিশ্রাম নিতে হবে। হাঁচি ও কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে। এর ফলে অন্যরা সংক্রমিত হবে না
  • ধোয়া এবং বায়ু দূষিত করে এমন কিছু থেকে দূরে থাকতে হবে

কিভাবে গলা ব্যথা প্রতিরোধ করা যায়

  • ভালো করে বার বার হাত ধুতে হবে
  • অন্যের ব্যবহৃত খাবারের জিনিসপত্র, গ্লাস, গামছা, খাবার অথবা তোয়ালে ব্যবহার করা যাবে না
  • পাবলিক ফোন ও পানির পাত্র (অন্যের ব্যবহৃত) মুখ দিয়ে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
  • স্যানিটারি পরিষ্কারক (Sanitizing Cleanser) দিয়ে নিয়মিত টেলিফোন, টিভি রিমোট এবং কম্পিউটার কী-বোর্ড পরিষ্কার করতে হবে
  • অসুস্থ মানুষদের থেকে দূরে থাকতে হবে
  • অতিরিক্ত দূষনের দিনে ঘরের ভিতরে থাকতে হবে
  • বাড়ির বাতাস শুষ্ক হলে তা আদ্র রাখার ব্যবস্থা করতে হবে
  • হাঁচি বা কাশির সময় পরিষ্কার রুমাল ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহারের পর তা পরিষ্কার করতে হবে
  • ধূমপান এবং ধূমপানের ধোয়াযুক্ত পরিবেশ থেকে দূরে থাকতে হবে

গলা ব্যথা কেন হয় ?

গলা ব্যথার জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী। কারণ গুলো হলো:

ভাইরাসজনিত অসু্‌স্থ্যতা যা গলা ব্যথার সাধারণ কারণ সেগুলো হলো :

  • ঠান্ডা
  •  ফ্লু
  • মনোনিউক্লিওসিস ( Mononucleosis)

অন্যান্য ভাইরাসজনিত অসু্স্থ্যতা যেমন-

  • হাম
  •  চিকেনপক্স
  • ক্রুপ (Croup)

ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণের ফলে গলা ব্যথা যেমন-

  • টনসিলের সমস্যা
  • ডিপথেরিয়ার

অন্যান্য কারণ

  • এলার্জি জনিত সমস্যা থাকলে
  • শুষ্ক আবহাওয়া, বিশেষ করে শীতকালে ঘরের তাপমাত্রা বেশি গরম থাকলে
  • ধূমপান করলে
  • মসলাযুক্ত খাবার খেলে
  • গলার মাংসপেশীতে চাপ লাগলে
  • এইচআইভি’র সংক্রমণ হলে
  • ধূমপান এবং মদপানের ফলে গলায় টিউমার হলে

কাদের গলায় ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বেশি ?

যাদের গলায় ব্যথা হওয়ার  সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তারা হলেন :

  • শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা
  • যারা ধূমপান করে অথবা ধূমপায়ী ব্যক্তির কাছাকাছি থাকে
  • ধূলা-বালি থেকে যাদের এলার্জি হয়
  • ঘরে ব্যবহৃত জ্বালানী ও রাসায়নিক বস্তুর সংস্পর্শে আসলে
  • যাদের দীর্ঘদিন ধরে সাইনাসের সমস্যা আছে
  • একসাথে অনেকে গাদাগাদিভাবে থাকলে যেমন-শ্রেণীকক্ষে, অফিসে ইত্যাদি
  • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

গলা ব্যথা থেকে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে ?

গলা ব্যথার ফলে অনেক মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন:

ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণের কারণে গলা ব্যথার ফলে সাধারণত: নিচের সমস্যাগুলো দেখা দেয়-

  • টনসিলে প্রদাহ
  • সাইনাসে প্রদাহ
  • কানের সংক্রমণ
  • ত্বকে টকটকে লাল ফুসকুড়ি যুক্ত সংক্রামক জ্বর (Scarlet fever)
  • কিডনির প্রদাহ
  • বাতজ্বর

গলা ব্যথা সমস্যার  সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো:

  • ঢোক গিলার সময় ব্যথা
  • টনসিল ফুলে যায় ও পূঁজ
  • মুখের তালুতে লালচে দাগ
  • জ্বর
  • মাথা ব্যথা
  • ফুসকুড়ি
  • ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে পাকস্থলীতে ব্যথা এবং বমি