খাদ্য ছাড়া আমাদের জীবন ধারণ সম্ভব নয়। দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং চলাফেরা করার জন্য সবল, রোগমুক্ত ও সুস্থ শরীর প্রয়োজন। সুস্থ শরীর বজায় রাখার জন্য আমরা যা কিছু খেয়ে থাকি তা-ই খাদ্য।
খাদ্যের কাজ
- শরীর গঠন ও বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণ
- শরীরে তাপশক্তি ও কর্মক্ষমতা যোগানো
- শরীর রোগমুক্ত রাখা
- অসুস্থ শরীরকে আরোগ্য লাভে সহায়তা করা
খাদ্যের শ্রেণীবিভাগ
কাজভেদে খাদ্যকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
যেমনঃ
ক. শক্তিদায়ক খাদ্য
এ সব খাদ্যের প্রধান ভূমিকা হলো, শক্তি ও তাপ উৎপাদন করে শরীরকে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখা। শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকর্ম যেমনঃ শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া, হৃৎপিন্ড ও অন্যান্য দেহ যন্ত্রের ক্রিয়া, পরিপাক ক্রিয়া, মলমূত্র নিষ্কাষণ ক্রিয়া এবং দৈনন্দিন জীবনে সকল কাজকর্ম সম্পাদনে শক্তি প্রয়োজন। যে সকল খাদ্য সামগ্রী হতে শক্তি পাওয়া যায় তা হলোঃ
- শস্য জাতীয় খাদ্য (যেমন চাল, গম, ভূট্টা, জোয়ার ইত্যাদি)
- মূল জাতীয় খাদ্য (যেমন গোল আলু, মিষ্টি আলু, মেটে আলু, কাসাবা ইত্যাদি)
- তেল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য (যেমন সব রকমের তেল, ঘি, মাংসের চর্বি ইত্যাদি)
- চিনি, গুড় ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য
খ. শরীর গঠন, বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণকারী খাদ্য
এ সকল খাদ্য মানবদেহে মূলত: শরীরের কাঠামো তৈরী বা শরীর গঠন, শরীরের বৃদ্ধি সাধন ও শরীরের ক্ষয় পূরণে কাজ করে থাকে। এসব খাদ্যের মধ্যে প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত:
- ডিম
- দুধ
- মাছ
- মাংস
এবং উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত:
- সব রকমের ডাল
- মটর শুঁটি
- সীমের বীচি
- কাঁঠালের বীচি
- বাদাম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
গ. রোগ প্রতিরোধক খাদ্য
এ সব খাদ্যের প্রধান ভূমিকা হলো, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, নানা প্রকার রোগ-ব্যাধি কিংবা অসুস্থতা হতে শরীরকে রক্ষা করা। রোগ প্রতিরোধক সস্তা খাদ্যের মধ্যে রয়েছে :
- রঙ্গিন শাকসব্জি
- ফলমূল
খাদ্য উপাদানের শ্রেণী বিভাগ
খাদ্য উপাদানকে নিম্নের ৬টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে :
- শ্বেতসার বা শর্করা ( উৎস- চাল, গম, ভুট্টা, চিড়া, মুড়ি, চিনি, গুড়, আলু ও মূল জাতীয় অন্যান্য খাদ্য)
- আমিষ ( উৎস – মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, মটর শুঁটি, সীমের বীচি, কাঁঠালের বীচি, বাদাম ইত্যাদি)
- স্নেহ জাতীয় খাদ্য (উৎস -তেল, ঘি, মাখন, চর্বি ইত্যাদি)
- খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন (উৎস – রঙ্গিন শাক-সব্জি ও ফল, ডিম, দুধ, কলিজা ইত্যাদি)
- খনিজ লবণ (উৎস – রঙ্গিন শাক-সব্জি ও ফল, ডিম, দুধ, কলিজা, মাংস, ছোট মাছ ইত্যাদি)
- নিরাপদ পানি
খাদ্য উপাদানের কাজ, উৎস ও মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
খাদ্যের মুখ্য উপাদান
- শ্বেতসার বা শর্করা
- আমিষ
- স্নেহ
খাদ্যের গৌণ উপাদান
- খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন
- খনিজ লবণ
- নিরাপদ পানি
খাদ্যের মুখ্য উপাদান
শ্বেতসার বা শর্করা
কাজ
- শরীরে তাপ শক্তি সরবরাহ করে
- তেল / চর্বি জাতীয় পদার্থ দহনে সাহায্য করে
- আমিষের প্রধান কাজ করতে সহায়তা করে এবং
উৎস
- চাল, গম, ভুট্টা, চিনি, গুড়, মিষ্টি, আলু, মিষ্টি আলু, কচু ইত্যাদি
মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ (আহারোপযোগী )
- মোট প্রয়োজনীয় খাদ্য শক্তির শতকরা প্রায় ৫০-৬০ ভাগ
আমিষ
কাজ
- দেহের গঠন ও বৃদ্ধি সাধন করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- শরীরে তাপ শক্তি সরবরাহ করে
- শরীরে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে
উৎস
- প্রাণিজ উৎস যেমন-মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, কলিজা
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন- সয়াবিন, কাঁঠালের বীচি, সীমের বীচি, ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি ইত্যাদি
মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ (আহারোপযোগী)
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১ গ্রাম ( পূর্ণ বয়স্কদের জন্য )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ২-৩ গ্রাম ( ৪ বছরের শিশুর জন্য )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.৭ গ্রাম ( ৪-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.৫ গ্রাম ( গর্ভবতী ও প্রসূতীর জন্য )
স্নেহ
কাজ
- দেহে শক্তি সরবরাহ করে
- দেহের ত্বককে মসৃণ রাখে
- খাবার সুস্বাদু করে ও তেল বা চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন শরীরে কাজে লাগাতে সাহায্য করে
উৎস
- প্রাণিজ উৎস যেমন-ঘি, মাখন, চর্বি
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন-সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, তিলের তেল, সূর্যমুখীর তেল, বাদাম, ডালডা, নারকেল (শুকনা )
মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ (আহারোপযোগী)
- প্রায় ৩৫-৪০ গ্রাম ( পূর্ণ বয়স্কের জন্য )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য দৈনিক ২-৩ গ্রাম ( ১ বছর পর্যন্ত শিশুর জন্য )