কিশোর কিশোরীদের সেবা
বাংলাদেশের মোট জনসংখার প্রায় এক-চতুর্থাংশ কিশোর কিশোরী। এ কিশোর কিশোরীদের শিক্ষা, জীবন-দক্ষতা ও স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের ভবিষ্যত।
বয়ঃসন্ধিকাল ও কৈশোর
বয়ঃসন্ধিকালে মানুষের শরীরে ও মনে নানা ধরণের পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং যৌবনে এসব পরিবর্তনগুলো পূর্ণতা লাভ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কে কৈশোর বলে। এ বয়সে ছেলেদের কিশোর ও মেয়েদের কিশোরী বলা হয়।
বয়ঃসন্ধিকাল ও কৈশোরের ঝুঁকি
- বন্ধুবান্ধবদের চাপে পড়ে তারা বিপদজনক কাজে জড়িয়ে যেতে পারে।
- কৌতুহলের বসে বা কোন অসৎ সঙ্গে পড়ে ধূমপান, মাদকাসক্তি, অনিরাপদ যৌন-আচরণসহ নানা ধরনের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে পারে।
- প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে প্রজননতন্ত্রে নানা ধরণের রোগ সংক্রমণ এবং অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের ঝুঁকি সম্ভবনাও বেড়ে যেতে পারে।
কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
- ছেলে ও মেয়ের মধ্যে কোন বিভেদ না রেখে প্রত্যেকেরই নিজ নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য যথাযথ সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ বয়সে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
- মেয়েরা কখনোই কম খাবার খাবে না বা নিজেদের অযত্ন করবে না। শারীরিকভাবে দূর্বল এবং অপুষ্টির শিকার কিশোরীরা পরবর্তীকালে গর্ভধারণ করলে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
- এ বয়সী ছেলেমেয়েদের ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন এবং কার্বো-হাইড্রেট আছে এ রকম খাবার খেতে হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসব্জি, দেশীয় বিভিন্ন ধরণের ফল, ডাল, সিমের বিচি, মাছ, ডিম, দুধ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য
বয়ঃসন্ধিকালেই কিশোর-কিশোরীরা প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে, তাই এ সময় থেকেই প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রয়োজন। কিশোর-কিশোরীরা প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারলে সুষ্ঠুভাবে নিজেদের যত্ন নিতে পারবে এবং এ শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সুস্থ-সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারবে।
প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়
- পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
- নিরাপদ যৌন আচরণ সম্পর্কে জানা ও তা মেনে চলা।
- প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ, যৌনরোগ সম্পর্কে জানা ও প্রতিরোধ করা।
- প্রয়োজন অনুযায়ী প্রজননস্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করা।
- অল্প বয়সে বিয়ে করা থেকে নিজেকে বিরত থাকা এবং অন্যদের উদ্বুদ্ধ করা।
নিরাপদ যৌন আচরণের জন্য করণীয়
- ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন এবং শারীরিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে কিশোর-কিশোরীদের এ বয়সে যৌন আচরণের ক্ষেত্রে সংযত থাকা উচিৎ।
- যৌন চিন্তা যাতে মনে কম আসে সে জন্য পড়াশোনা, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক চর্চাসহ অন্যান্য সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা প্রয়োজন।
- অশ্লীল বইপত্র এবং ভিডিও বা সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
- যৌন নির্যাতনের শিকার হলে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মা-বাবা বা বিশ্বস্ত কোনো মানুষকে বিষয়টি জানানো দরকার।
- কোন কারণে যদি কিশোর বয়সে বিয়ে হয়েই যায় তবে অবশ্যই পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর পরামর্শ মতো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিৎ।