কিডনি আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের জীবিত রাখার জন্য কিডনি দেহের বিভিন্ন কাজ করে থাকে। যখন কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এছাড়াও যখন আমাদের কিডনি খারাপ হয়ে যায় তখন ভিন্ন ধরণের লক্ষণ দেখা যায়। কিডনি রোগের লক্ষণ না জানতে পারলে কিডনি রোগের প্রতিকার করা সম্ভব নয়।
কিছু লক্ষণ আবার সময় মতো ধরতে পারি না। যার ফলে এই লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে প্রবল আকার ধারন করে এবং রোগীরা সঠিক সময়ে মনোযোগ না দেওয়ার কারণে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারে না। যার ফলে বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের এই রোগের লক্ষণগুলি আগে জেনে রাখা দরকার এবং সঠিক সময় চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
তাই আজকের এই নিবন্ধে আপনাদের কিডনি রোগের প্রতিকার কীভাবে করবেন তা জানাব, তবে তার আগে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে এই রোগের লক্ষণ। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক কিডনি রোগের লক্ষণ এবং তার প্রতিকার।
কিডনি রোগের লক্ষণগুলি কি কি?
আজকাল ভুল খাওয়া- দাওয়া অভ্যাসের কিডনি রোগের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিডনির রোগ তখন হয় যখন কিডনি খারাপ হয়ে যায়। যার জন্য অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অথবা অন্য যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী অসুখ কারণেও কিডনির সমস্যা হয়ে থাকে।
কিডনি রোগের কারণে দেহের অন্যান্য অংশেও প্রভাব পড়তে পারে। যেমন- নার্ভের ক্ষতি, হাড় দুর্বল হয়ে পড়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা দেখা যেতে পারে। যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয় তাহলে কিডনি সম্পূর্ণ রুপে খারাপ হয়ে পড়ে এবং কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তাই কিডনির লক্ষণগুলি জেনে রাখা জরুরী।
কিডনি খারাপ হয়ে গেলে এই রোগের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। তবে অনেক সময় কিছু লক্ষণ আমাদের নজরে আসে না। কিডনি রোগের সম্ভাব্য লক্ষণগুলি হল –
- প্রস্রাবে পরিবর্তন অর্থাৎ প্রস্রাব কম হওয়া।
- বমি বমি ভাব
- ছোট শ্বাস
- প্রস্রাবে জ্বালাভাব
- পা, পায়ের পাতা, গোড়ালিতে র্যাশ
- বুকে ব্যথা
- খিদে না পাওয়া কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে।
- প্রায়ই দুর্বল ভাব।
আপনি যদি প্রায়ই এই সমস্যাগুলির মুখোমুখি হন তাহলে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসা শুরু করে দিন।
কিডনি রোগের প্রতিকার –
কিডনি রোগের চিকিৎসা সাধারণত রোগ নিয়ন্ত্রনের উপর মনোযোগ দেওয়া হয়। এর জন্য ডাক্তার আপনাকে বেশি সহায়তা করতে পারেব। কিডনি রোগ হলে অবশ্যই ডাক্তারের চিকিৎসা প্রয়োজন সময় মতো পরীক্ষা করানো এবং সঠিক সময়ে ঔষধ নিতে হবে। পাশাপাশি আপনার ডায়েট পরিবর্তন করতে হবে এবং সঠিক সময়ে খেতে হবে। এবং ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী চলতে হবে।
তবে আমরা একটু সতর্ক হলে কিডনি রোগের প্রতিকার করতে পারি। যাতে আমাদের কিডনির সমস্যা না হয় তার জন্য আমাদের প্রত্যেককে একটু সচেতন হতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণে জল খানঃ
ডাক্তারদের মতে কিডনি রোগের প্রতিকারের একমাত্র উপায় জল। আমাদের দৈনিক প্রচুর পরিমাণে জল পান করা উচিত।
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ
আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে আপনাকে প্রথমেই সচেতন হতে হবে। কারণ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের কিডনি খারাপ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার ত্যাগ করুন এবং নিয়মিত হাঁটাচলা করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
কিডনি রোগের প্রতিকার করতে চাইলে আমাদের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী। যাদের হাই ব্লাড প্রেসার তাদের নিয়মিত নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হতে হবে।
- ধূমপান, নেশা করা বন্ধ করুনঃ
৬০ শতাংশ লোকের কিডনি খারাপ হওয়ার একমাত্র কারণ ধূমপান বা নেশা করার জন্য। সিগারেট আমাদের কিডনির ক্ষতি করে দেয় যার ফলে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ দেখা যায়। তাই যাদের কিডনি খারাপ তাদের ধূমপান এবং নেশা করা ছেড়ে দেওয়া উচিত। এবং যাদের কিডনি খারাপনয় তাদেরও ধূমপান এবং নেশা থেকে বিরত থাকা উচিত।
- খাদ্যঃ
পুষ্টিকর খাদ্য যেমন- ফল, সবজি, শস্য, মাছ, ডিম বেশি করে গ্রহণ করা উচিত। আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া অত্যন্ত জরুরী।
- নিয়মিত ব্যায়াম অনুশীলনঃ
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম স্বাভাবিক রক্তচাপ মাত্রা বজায় রাখার জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়। এটি ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিটি ব্যক্তির শরীরচর্চা করা উচিত।
- ভেজাল খাদ্য থেকে পরিত্যাগ করুনঃ
কিডনি ভালো রাখতে গেলে আমাদের প্রত্যেকের খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরী। বাইরের ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
আশা করি কিডনির লক্ষণ এবং তার প্রতিকার জেনে গেলেন। লক্ষণগুলি দেখতে পারলে অবশ্যই চিকিৎসা করুন এবং সুস্থ থাকুন।