ওজন কমানোর জন্য এক্সারসাইজ বা খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করাই যথেষ্ট নয়। জানতে হবে সঠিক প্রক্রিয়া। শরীরের গঠন ও প্রয়োজন অনুযায়ী বাছতে হবে সঠিক প্লান। তিন দিন ডায়েটিং করার পর চতুর্থ দিনই লাগামছাড়া খাওয়াদাওয়া করলে কিংবা সাত দিন এক্সারসাইজ করে, গায়ে হাতে পায়ে ব্যথা বলে দুই দিন ছুটি নিলে চলবে না। ওজন কমানোর প্রাকৃতিক উপায় হলো এমন ডায়েট মেনে চলা, যাতে বেশি পরিমাণে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার থাকে। মাঝারি পরিমাণে প্রোটিন এবং কম পরিমাণে ফ্যাট থাকে। পুরো লাইফস্টাইলেই আনতে হবে পরিবর্তন।
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ
নির্মেদ শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, সঠিক ডায়েটিং মেনে চলা এবং ডায়েটের বিষয়টি শুধু ওজন কমানোর জন্য নয়, ওজন কমে যাওয়ার পরও সেটা মেইনটেইন করা দরকার।
ডায়েট করারও কিছু নিয়ম আছে। সব খাবার বন্ধ করে দেবেন না। যেমন যদি সব ধরনের হাই ক্যালরিযুক্ত খাবার বাদ দেন তাহলে ওজন কমবে ঠিকই, একই সঙ্গে আপনার শরীর দুর্বল হয়ে যাবে।
আপনার শরীরে যতটা ক্যালরি প্রয়োজন, আপনি যদি তার থেকে কম গ্রহণ করেন তাহলে আপনার ওজন কমলেও ফ্যাট করবে না। এটাকে বলা হয় স্টারভেশন মোড। এর ফলে কান্তি, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, মনোযোগের অভাব এসব সমস্যা দেখা দেয়। তাই লো ক্যালরি খাবার খেয়ে শরীরকে কষ্ট দেবেন না।
- লাঞ্চ বা ডিনারের সাথে লো ক্যালরি হাই ফাইবার খাবার যেমন সালাদ বা তাজা ফল খান।
- ভেজিটেবল স্যুপ খান। স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ গোশত বা ডিমের কুসুম বাদ দিন। মিষ্টি, চকলেট, আইসক্রিম থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন। রোজ এক বাটি স্প্রাউট খেতে পারেন।
না খেয়ে ওজন কমানোর কথা ভাববেন না। ব্রেকফাস্ট কখনোই বাদ দেবেন না। একইভাবে ডিনারে হালকা খাবার খান। কারণ ডিনারে অতিরিক্ত ক্যালরি মেদ বাড়িয়ে দিতে পারে। ডায়েট চার্ট করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অন্যেরটা দেখে নিজের জন্য ডায়েট চার্ট করবেন না।
ডায়েট টিপস
কোন ধরনের কাজের সঙ্গে আপনি যুক্ত তার ওপর নির্ভর করবে আপনার ডায়েট চার্ট। খাদ্যাভ্যাস ও বাজেটের ওপর ভিত্তি করে ডায়েট চার্ট তৈরি করে নিন।
- প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে ফল, শাকসবজি ও পানি পান করুন।
- ডুবো তেলে ভাজা কিছু খাবেন না।
- এনার্জি ড্রিংকস, হেলথ ড্রিংকস, সফট ড্রিংকস খাবেন না।
- চিনি একেবারেই খাবেন না।
- আলু, চালের রুটি খাবেন না।
- গরু, খাসির মাংস ও চিংড়ি মাছ মোটেই খাবেন না।
- খাদ্যতালিকায় ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যাতে যথেষ্ট পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন।
- দুপুর ও রাতের খাবারের মাঝামাঝি সময়ে খুব খিদে পেলে শুকনো রুটি বা টোস্ট বিস্কুট খান। ফল, সবজি বা এক বাটি মুড়ি খেতে পারেন।
- বেশি রাতে কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় খাবার কম খাবেন।
ব্যায়াম
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যায়াম করা খুবই জরুরি। যারা জিমে যেতে পারেন না, তারা বাসাই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন। তবে কতক্ষণ করবেন সেটি নির্ভর করবে আপনার শারীরিক প্রয়োজন ও চাহিদার ওপর। একবারেই সব মেদ কমনোর চেষ্টা করবেন না। বরং ১০ শতাংশ কমানোর প্রাথমিক লক্ষ্য স্থির করুন। আপনি ফিট থাকতে পারবেন এবং অতিরিক্ত মেদ শরীরে জমা হবে না।
- নিয়মিত এক্সারসাইজে আপনার মেটাবলিক রেট বেড়ে যাবে। ফলে ওজন কমবে ধীরে ধীরে। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের মধ্যে জাম্পিং, জগিং, স্ট্রেচিং, সিট আপস প্রভৃতি পদ্ধতি করতে পারেন। এ ছাড়া যোগব্যায়ামও করতে পারেন। তবে প্রথমে ওয়ার্মআপ করে নেবেন।
- বাড়িতে যত সময় অবস্থান করবেন সে সময় শুয়ে-বসে না থেকে হাঁটাচলা করুন। আপনার বাড়িতে লিফট থাকলেও দৈনিক কয়েকবার সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন। আরো ভালো হয় যদি হালকা জিনিসপত্র বহন করা যায়। এতে মাসল টোনড হবে।
- বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং ব্যায়াম, যেমন- আর্ম স্ট্রেচিং বা লেগ লিফটিং করতে পারেন। রক্তসঞ্চালন ভালো হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের মেদ কমে যাবে।
- হার্ট সুস্থ রাখার জন্য জগিং খুব ভালো ব্যায়াম। বাড়ির যেকোনো জায়গায় আপনি স্পট জগিং করতে পারেন। এ সময় উপযুক্ত জুতা পরবেন, যাতে পায়ের ওপর স্ট্রেস না পড়ে।
নিয়মিত করুন
ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ ও উদ্যমী জীবনযাপন করতে চাইলে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার সাথে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- অনেকক্ষণ বসে না থেকে মাঝে মাঝে কিছুটা হাঁটাচলা করুন।
- ঘরের কাজগুলো নিজেই করার চেষ্টা করুন।
- দুপুরে না ঘুমিয়ে কোনো কাজ করুন।
- দুধ-চিনি দেয়া চায়ের বদলে লিকার খান। সকালে এক গ্লাস লেবু মেশানো হালকা গরম পানি পান করুন।
- কাজের ফাঁকে ফল খান।
- একসাথে বেশি না খেয়ে অল্প করে কয়েকবার খান।
- খাওয়ার আগে দুই গ্লাস পানি পান করুন।
- টিভি দেখতে দেখতে খাবেন না; কারণ এতে বেশি খেয়ে ফেলতে পারেন।
- যা খেতে ভালোবাসেন মাঝে মধ্যে অবশ্যই খাবেন; তবে অল্প খাবেন।
- অল্প তেলে রান্না করা খাবার খান।
- রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে এসব কাজ নিয়মিত করতে হবে। তাহলেই প্রত্যাশিত ফল পাবেন।