এইচআইভি বা এইডস হলো জীবনহানিকর একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। এখন পর্যন্ত এইচআইভি/এইডসের কোন কার্যকর চিকিৎসা আবিস্কার হয়নি। এইডসের সংক্রমণ প্রতিরোধ সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এর প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং এইডস সম্পর্কে পড়াশুনা ও সচেতনতা।
এইডস কি
এইডস একটি সংক্রামক রোগ যা এইচআইভি (Human Immunodeficiency Virus) ভাইরাসের সংক্রমণের মাধ্যমে হয়। এটি মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এইচআইভি সংক্রমণের ফলে অন্যান্য রোগ যেমন-নিউমোনিয়া, মেনিননজাইটিস এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। এইচআইভি সংক্রমণের পরের ধাপকেই এইডস (Acquired Immunodeficiency Syndrome) বলা হয়।
এইডস হয়েছে কি করে বুঝছেন
সংক্রমণের ধাপের উপর নির্ভর করে এইচআইভি ও এইডসের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো পৃথক হয়ে থাকে।
এইডস এর লক্ষণ ও উপসর্গ
সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত:
- জ্বর
- মাথা ব্যথা
- গলা ভাঙ্গা
- লসিকাগ্রন্থি ফুলে উঠা (Swollen lymph glands)
- শরীরে লালচে দানা (Rash) ইত্যাদি লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়।
সংক্রমণের পরবর্তী সময় সাধারণত:
- অস্থিসন্ধি ফুলে উঠা (Swollen lymph nodes)
- ডায়রিয়া
- শরীরের ওজন কমা
- জ্বর
- কাশি এবং শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়।
সংক্রমণের শেষ পর্যায়ে সাধারণত:
- রাতের বেলা খুব ঘাম হওয়া
- কয়েক সপ্তাহ ধরে ১০০ ফারেনহাইট (৩৮ সে.) বা এর অধিক তাপমাত্রার জ্বর অথবা কাঁপুনি
- শুকনা কাশি এবং শ্বাস কষ্ট
- দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া
- মুখ অথবা জিহ্বা বেঁকে যাওয়া অথবা সাদা দাগ পড়া
- মাথা ব্যথা
- সবকিছু অস্পষ্ট ও বিকৃত দেখা
- তীব্র অবসাদ অনুভব
- তিন মাসের অধিক সময় ধরে অস্থিসন্ধি ফুলে থাকা ইত্যাদি লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে এইচআইভি’র লক্ষণ
- ওজন বৃদ্ধি না পাওয়া
- স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া
- হাঁটতে সমস্যা
- মানসিক বৃদ্ধি দেরীতে হওয়া
- কানের সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং টনসিলের মতো সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার প্রকট আকার ধারণ করা
কিভাবে এইডস ছড়ায়
- শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে
- এইচআইভি সংক্রমিত রক্ত আদান-প্রদানের মাধ্যমে
- কারো ব্যবহৃত সুচ এবং সিরিঞ্জ ব্যবহারে মাধ্যমে
- সিরিঞ্জ এর মাধ্যমে দুর্ঘটনা জনিত কারণে
- গর্ভবতী মা এইচআইভিতে আক্রান্ত হলে, ডেলিভারীর সময় এবং আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলে শিশুর এই রোগ হতে পারে।
- শরীরের কোন অঙ্গ বা কলা প্রতিস্থাপন করলে অথবা জীবাণুমুক্ত করা হয়নি এমন সরঞ্জাম দিয়ে দাঁতের চিকিৎসা বা অপারেশন করলে।
কি করলে এইডস ছড়ায় না
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে খাওয়া দাওয়া করলে
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পায়খান (Toilet) ব্যবহার করলে
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাত মিলালে
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে খেলাধূলা, কোলাকুলি করলে
- এই থালায় ভাত খেলে
কখন ডাক্তার দেখাবেন
রোগের প্রাথমিক ও পরবর্তী পর্যায়ের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
- রক্তের পরীক্ষা (ELISA and Western blot tests)
- মুখের শ্লেষ্মা পরীক্ষা (Oral Mucus)
কি ধরণের চিকিৎসা আছে
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন এবং অন্যান্য নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
এইচআইভি/ এইডস আক্রান্ত হলে জীবন-যাপন পদ্ধতি
- শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন না করা
- গর্ভধারণ না করা
- বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানো
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন ও নির্দেশনা মেনে চলা
- প্রতিষেধক গ্রহণ
- সুষম খাদ্য যেমন-তাজা শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি খাওয়া
- যেসব খাবার খেলে সংক্রমণ হতে পারে যেমন-কাঁচা খাবার সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা
- বিশুদ্ধ পানি পান করা
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা
- পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম
- ধূমপান ও মদপান থেকে বিরত থাকা
- হাত ভালোমত পরিষ্কার করা
এইডস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
- নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন
- এইচআইভি আক্রান্ত কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা থেকে বিরত থাকা
- অপরিষ্কার এবং কারো ব্যবহৃত সুচ ব্যবহার না করা
- কারো থেকে রক্ত গ্রহণ করতে হলে সেটা এইচআইভি সংক্রমিত কিনা পরীক্ষা করে দেখা
- নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা
- এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্লেড এবং টুথব্রাশ ব্যবহার না করা
- গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে সঠিক যত্ন নেয়া
- সতর্কতার সাথে নিজের শারীরিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল রাখা
এইডস কেন হয় ?
বিশেষ এক ধরণের জীবাণু এইচআইভি (Human Immunodeficiency Virus) দ্বারা সংক্রমণের মাধ্যমে এইডস হয়।
কাদের এইডস হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে ?
যাদের এইডস হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে তারা হলেন :
- যারা একের অধিক সঙ্গীর সাথে অনিরপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন
- যাদের এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে
- সিফিলিস (Syphilis), হার্পিস (Herpes), ক্ল্যামাইরিয়া ( Chlamydia), গনোরিয়া (Gonorrhea) অথবা Bacterial vaginosis এর মত যৌনবাহিত রোগ ( Sexually Transmitted Disease) হলে
- অন্যের ব্যবহৃত সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে
- এইচআইভি আক্রান্ত মায়েদের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া শিশু
এইডস হলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে ?
এইডস হলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে :
ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ
- ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া (Bacterial Pneumonia)
- মাইকোব্যাকটেরিয়াম এভিয়াম কমপ্লেক্স বা ম্যাক (Mycobacterium Avium complex) সংক্রমণ
- যক্ষা (Tuberculosis)
- সালমোনেললোসিস (Salmonellosis)
- ব্যাসিলারী এনজিওম্যাটোসিস (Bacillary angiomatosis)
ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ
- সাইটোমেগালো ভাইরাস (Cytomegalovirus)
- ভাইরাল হেপাটাইটিস (Viral hepatitis)
- হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস (Herpes simplex virus)
- হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (Human papillomavirus)
- প্রোগ্রেসিভ মালটিফোকাল লিউকোএনসিফ্যালোপ্যাথি (Progressive Multifocal Leukoencephalopathy (PML)
ছত্রাকজনিত সংক্রমণ
- ক্যানডিডিয়াসিস (Candidiasis)
- ক্রিপটোকক্কাল মেনিনজাইটিস (Cryptococcal meningitis)
জীবাণু সংক্রমণ
- নিউমোসিসটিস কারিনি নিউমোনিয়া (Pneumocystis carnii Pneumonia (PCP))
- টক্সোপ্লাজমোসিস (Toxoplasmosis)
- ক্রিপটোস্পোরিডিওসিস (Cryptos poridiosis)
ক্যান্সার সংক্রান্ত জটিলতা
- কাপোসিস সারকোমা (Kaposi’s Sarcoma)
- নন-হডকিনস লিম্ফোমা (Non-Hodgkin’s Lymphoma)
অন্যান্য জটিলতা
- শরীরের ওজন কমে যাওয়া এবং ডায়রিয়া,দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা এবং জ্বর(Wasting syndrome)
- স্নায়ুগত জটিলতা (Neurological Complications)
- মৃত্যূ বরণ