স্ট্রোক

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

স্ট্রোক একটি জরুরি স্বাস্থ্যগত অবস্থা। স্ট্রোকের দ্রুত চিকিৎসা হওয়া অতি জরুরি। কারণ স্ট্রোকের দ্রুত চিকিৎসা করা হলে মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং স্ট্রোক সংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

স্ট্রোক কি

মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে বা বন্ধ হলে মস্তিষ্কের কলাগুলো অক্সিজেন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান পায় না ফলে স্ট্রোক হয়। স্ট্রোকের কিছুক্ষণের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষগুলো মরতে শুরু করে।

স্ট্রোক হয়েছে কি করে বুঝবেন

স্ট্রোক হলে সাধারণত: নিচের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা যায় :

  • হাঁটতে বা চলাফেরা করতে এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে  সমস্যা হয় এবং মাথা ঝিমঝিম করে
  • কথা জড়িয়ে যায় এবং অস্পষ্ট শোনায়
  • শরীরের একপাশ দূর্বল, অসাড় ও প্যারালাইজড হয়ে যায়
  • চোখে কোন কিছু অস্পষ্ট, অন্ধকার ও দুইটি দেখা যায়
  • অস্বাভাবিক মাথা ব্যথার সাথে ঘাড় ব্যথা, মুখ ব্যথা, দুই চোখের মধ্যখানে ব্যথা, বমি হয়

কখন ডাক্তার দেখাবেন

উপরোক্ত লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তার দেখাতে হবে। এছাড়া নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিলে জরুরি অবস্থা গ্রহণ করতে হবে :

  • শ্বাস নেয়া বন্ধ হয়ে গেলে মুখ থেকে মুখে শ্বাস দিতে হবে
  • বমি হলে মাথা একদিকে কাত করতে হবে
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে কিছু খাওয়ানো বা পান করানো যাবে না

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

  • শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
  • কারোটিড আল্ট্রাসাউন্ড (Carotid Ultrasound)
  • কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফী (Computerized Tomography)
  • ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং (Magnetic resonance imaging )
  • ইকোকারডিওগ্রাফী (Echocardiography)

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

স্ট্রোকের ধরণ, মাত্রা এবং রুগীর বয়সের উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে।

ইসেকমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke) এর ক্ষেত্রে

  • তৎক্ষণাত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে- রুগীকে রক্ত জমাট না হওয়ার ঔষধ সেবন করানো
  • স্ট্রোকের পরপরই রুগীকে এসপিরিন সেবন করানো। এটি পুনরায় স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমায়
  • শল্য চিকিৎসা

স্ট্রোক কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

স্ট্রোক প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল উপায় হলো স্ট্রোকের ঝুঁকি সর্ম্পকে জানা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলা। এই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি হলো:

  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • দেহের সঠিক ওজন বজায় রাখা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • মানসিক চাপমুক্ত থাকা
  • ধূমপান থেকে বিরত থাকা
  • শিরা পথে মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ-বিশেষ করে শাকসব্জী, দুধ ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, ভূষি সমৃদ্ধ খাবার যেমন: ঢেকী ছাঁটা চালের ভাত, শুটকী মাছ ইত্যাদি খাওয়া

স্ট্রোক হওয়ার কারণ কি ?

স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণ হলো মস্তিষ্কের রক্তের সরবরাহে সমস্যা। যেমন :

  • ইসেকমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke) মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ কম হলে
  • হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke) মস্তিষ্কে রক্তের ক্ষরণ হলে

স্ট্রোক কয় ধরণের হয়ে থাকে?

স্ট্রোক প্রধানত দুই ধরনের হয়। যেমন :

  1. ইসেকমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke)
  2. হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke)

এছাড়া আরো একধরণের স্ট্রোক রয়েছে যাকে বলা হয় ট্রানজিয়েন্ট ইসেকমিক আ্যাটাক ( Transient Ischemic Attack)

কাদের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি ?

যাদের স্ট্রোক হওয়ার  সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তারা হলেন :

  • যাদের পরিবারে স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক অথবা টিআইএ (TIA) হওয়ার ইতিহাস আছে
  • ৫৫ বছর বা এর বেশি বয়সীদের
  • যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে
  • যাদের বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস আছে
  • যারা অতিরিক্ত মোটা
  • যাদের হৃদপিন্ডের বিভিন্ন অসুখ যেমন-হৃদপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া (Heart failure), হৃদপিন্ডের ত্রুটি (Heart defect), হৃদপিন্ডের সংক্রমণ (Heart Infection), হৃদপিন্ডের অস্বাভাবিক স্পন্দন ইত্যাদির সমস্যা আছে
  • যাদের আগে একবার স্ট্রোক অথবা টিআইএ হয়েছে
  • যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ ঔষধ সেবন করেন অথবা অন্যান্য হরমোন থেরাপি নেন
  • যারা ধূমপান ও মাদক সেবন করেন

স্ট্রোকের ফলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দেয় ?

স্ট্রোকের ফলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দেয় :

  • প্যারালাইসিস অথবা মাংসপেশী অবশ হয়ে যাওয়া
  • খাবার গিলতে এবং কথা বলতে সমস্যা/কথা বলতে না পারা
  • স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়া এবং কোন কিছু বুঝতে পারার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়া
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা করা