জরায়ুর ক্যান্সার

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

মহিলাদের জরায়ুর মুখে যে ক্যান্সার হয় তাকে জরায়ুর ক্যান্সার বলে। এই ক্যান্সার অত্যন্ত মারাত্মক যা বিশ্বব্যপী মহিলাদের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারন। জরায়ুর ক্যান্সার সাধারনত ৩০ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে বেশী হয়ে থাকে। বয়স্ক ও দরিদ্র মহিলারা জরায়ু ক্যান্সারের জন্য সর্বোচ্চ ঝুঁকি পূর্ণ।

জরায়ু ক্যান্সারের কারণ কি?

হিউম্যান প্যাপিলোমা নামে একধরনের ভাইরাসের সংক্রামনের ফলে ৯৯% জরায়ু ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। এই ভাইরাস যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে সংক্রমিত হয়। অন্যান্য কারণেও এই ভাইরাস জরায়ু ক্যন্সার সৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। যেমন-

  • অল্প বয়সে যৌন সম্পর্ক
  • একাধিক যৌন সঙ্গী
  • একাধিক পূর্ন গর্ভধারণ
  • কলামাইডিয়া, গনোরিয়া, সিফিলিস বা হরপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস টাইপ-২ সংক্রামণ
  • ধূমপান
  • দীর্ঘ সময়ের জন্য মৌখিক গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
  • HIV আক্রমন
  • মা বা বোনের যদি জরায়ু ক্যন্সার থাকে
  • রক্তে নিম্ন মাত্রায় ফলিক অ্যাসিড

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ কি?

জরায়ু ক্যান্সার একটি ধীর বর্ধনশীল ক্যান্সার। এই ক্যান্সার হতে সাধারনত ১০-১৫ বছর সময় লাগে। প্রথম পর্যায়ে এই ক্যান্সারের কোন উপসর্গ দেখা যায় না। জরায়ু ক্যান্সার হলে নিম্নোক্ত উপসর্গ গুলো হতে পারে।

  • দুই মাসিকের মধ্যে রক্তপাত
  • যৌন সংগমের পর রক্তপাত
  • Douching পর রক্তপাত
  • Pelvic পরীক্ষার পর রক্তপাত
  • Pelvic ব্যাথা যা মাসিক চক্র এর সাথে সম্পর্কিত নয়
  • ভারি বা অস্বাভাবিক স্রাব, স্রাবে দুর্গন্ধ থাকতে পারে
  • অনেক বার প্রস্রাব করা
  • প্রস্রাব করার সময় ব্যাথা অনুভর করা

জরায়ূ ক্যান্সার নির্ণয়ঃ:

একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ু ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়। সাধারনত DNA অথবা Pap Test এর মাধ্যমে সম্ভাব্য জরায়ু ক্যান্সার বা Dysplasia সনাক্ত করা হয়। DNA পরীক্ষার মাধ্যমে HPV সংক্রমণের ঝুঁকি নির্ধারণ করা হয়। বায়পসির মাধ্যমে Pre-cancer বা ক্যান্সার কোষ নিশ্চিত করা হয়।

জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ :-

জরায়ু ক্যান্সার টিকাঃ

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য এখন টিকা পাওয়া যায়। মেয়েদের বয়স যখন ১০ থেকে ১২ বছর তখন তিনটি ডোজে, ছয় মাসের মধ্যে এই টিকা দেওয়া হয়। এই টিকা মূলত বিয়ের পূর্বে অথবা যৌন সক্রিয় হওয়ার আগে দেওয়া উচিত।

  • জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা টিকা। দ্বিতীয় কার্যকর ব্যবস্থা যথাসময়ে ভায়া বা প্যাপস্মিয়ার পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণ বা স্ক্রিনিং।
  • নারী ও পুরুষ উভয়েই টিকা গ্রহণ করতে পারে।
  • টিকা নিলে শরীরে এইচপিভির বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে তাকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।
  • জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের টিকা সারভারিক্স দেশে পাওয়া যায়। নিকটস্থ গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই টিকা গ্রহণ করা যেতে পারে। এই টিকা সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিক, মেরিস্টোপস্ ক্লিনিক, বড় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও পাওয়া যায়।

এই টিকাটি ৯ বছর বয়স থেকে নারীকে দিতে হয়। এটির তিনটি ডোজ, প্রথম নেওয়ার এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ। এই টিকা হাতের মাংসপেশিতে দিতে হয়।

  • সাধারণত ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে টিকা গ্রহণ করা ভালো। এ বয়সে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার হার অন্য বয়সের চেয়ে বেশি থাকে।
  • যৌন সক্রিয় নারীদের নিয়মিত ভায়া বা প্যাপস্মিয়ার টেস্ট করাতে হবে।
  • অল্প বয়সে বিয়ে ও বেশি সন্তান গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং অপুষ্টিজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।