কোষ্ঠকাঠিন্য

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

কোষ্ঠকাঠিন্যের সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিন।

বয়স্ক এবং যারা পরিশ্রমের কাজ করেন না, এদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাদের উচিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ

১. আঁশযুক্ত খাবার এবং শাকসবজি কম খাওয়া

২. পানি কম খাওয়া

৩. দুশ্চিন্তা

৪. কায়িক পরিশ্রমের অভাব

৫. অন্ত্রনালিতে ক্যানসার

৬. ডায়াবেটিস

৭. মস্তিষ্কে টিউমার ও রক্তক্ষরণ

৮. দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকা

৯. বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ

১. শক্ত ও কঠিন মল

২. মলত্যাগে অনেক বেশি সময় লাগা

৩. অনেক বেশি চাপের দরকার হওয়া

৪. অধিক সময় ধরে মলত্যাগ করার পরও অসম্পূর্ণ মনে হওয়া

৫. মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা

৬. প্রায়ই আঙুল, সাপোজিটরি বা অন্য কোনো মাধ্যমে মল বের করার চেষ্টা

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এর চিকিৎসা না করা হলে যেসব সমস্যা হতে পারে

১. মল ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া

২. পাইলস

৩. এনাল ফিশার

৪. মলদ্বার বাইরে বের হয়ে আসা

৫. মানসিকভাবে অশান্তি

৬. প্রস্রাবের সমস্যা

৭. খাদ্যনালিতে প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যাওয়া

৮. খাদ্যনালিতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যাওয়া l

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়ঃ

১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে;

২. বেশি করে পানি খেতে হবে;

৩. দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে;

৪. যারা সারাদিন বসে কাজ করেন তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে

৫. ফাস্ট ফুড, ভাঁজা পোড়া খাবার, গরু ও খাশির মাংস এবং অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার যেগুলো মল শক্ত করে তা বাদ দিলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে পারে।

৬. বয়স্ক এবং যারা পরিশ্রমের কাজ করেন না, এদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাদের উচিত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয় করে সে হিসেবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

 কোষ্ঠকাঠিন্যের নিরাময়ে ঘরোয়া টিপসঃ

ইসবগুল

দীর্ঘমেয়াদি হজমের সমস্যা সমাধানের জন্য অত্যন্ত প্রচলিত একটি পদ্ধতি হলো ইসবগুলের সরবত খাওয়া। ইসবগুলের সরবত খেলে পেট ঠান্ডা থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়। ২ চা চামুচ ইসুফগুলের ভুসি ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলুন;

ঘৃতকুমারীর রস (অ্যালোভেরা)

যাদের হজমে প্রায়ই গন্ডগোল হয় তাঁরা ঘৃতকুমারীর রস খেলে উপকার পাবেন। ঘৃতকুমারীর রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। ঘৃতকুমারী পাতা থেকে চামচ দিয়ে রস বের করে নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরার রসে কিছুটা পানি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খান। এতে হজম শক্তি বাড়বে, পরিপাকতন্ত্র সতেজ থাকবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। আর ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

পেঁপে, বেল, পেয়ারা বা আনারস

এসব ফল হজম সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ উপকারী । পেঁপেতে আছে পাপেইন ও কাইমোনপ্যাপাইন নামক এনজাইম। এই দুটি এনজাইমই হজমে সহায়ক। এই এনজাইম দুটি পেট পরিষ্কার করে এবং হজম সমস্যার সমাধান করে। আনারসে ব্রোমেলাইন এনজাইম আছে। ব্রোমেলাইন বদহজমের জন্য দ্বায়ী প্রোটিনগুলোকে ধ্বংস করে। ফলে আনারস খেলে পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া ও বদহজম সমস্যার সমাধান হয়। এসব ফল জুস করে কিংবা টুকরো করে চিবিয়ে খেলে পেটের সব ধরণের হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

টক দই

টক দইয়ের ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত উপকারী। এটা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং উপকারি ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়। টক দইয়ে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা কোষ্টকাঠিন্য দুর করে। এটি কোলন ক্যান্সার রোগীদের খাদ্য হিসাবে উপকারি। টক দই শরীরে টক্সিন জমতে বাধা দেয় | তাই অন্ত্রনালী পরিষ্কার রেখে শরীরকে সুস্থ রাখে ও বুড়িয়ে যাওয়া বা অকাল বার্ধক্য রোধ করে|

মৌরি

যে কোনো মশলার দোকানেই মৌরি কিনতে পাওয়া যায়। খেতে কিছুটা মিষ্টি স্বাদের এই মশলাটি। প্রতিবার খাওয়ার পরে অল্প কিছু শুকনো মৌরি চিবিয়ে খেয়ে নিন। সকালের নাস্তায়, দুপুরের খাবারে কিংবা রাতের খাবার খাওয়ার পড়ে আধা চামচ বা তার চেয়ে একটু কম শুকনো মৌরি ভালো করে চিবিয়ে গিলে ফেলুন। শুকনা গিলতে সমস্যা হলে একটু পানি দিয়ে গিলুন। নিয়মিত খেলে হজমের সমস্যা দূরে থাকবে চিরকাল এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

আদা ও লেবু

হজমের গন্ডগল ঠিক করতে আদাও লেবুর রস মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। ১ চা চামচ আদা বাটা এবং অর্ধেকটা লেবুর রস হাল্কা গরম পানির সাথে এক সাথে মিশিয়ে পান করুন। হজমের গন্ডগোল থেকে নিস্তার মিলবে।

কমলার রস

দুটি কমলা লেবুর রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে, ৮-১০ দিনের মধ্যে স্থায়ী ভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়।

রুটি

তিন ভাগের দু’ভাগ গম এবং একভাগ ছোলা মিশিয়ে আটা তৈরি করে, রুটি বানিয়ে খেলেও পেট পরিষ্কার থাকে।

শাক সবজি ও ফল

পালং শাক, পুই শাক, কলমি শাক বা শাকের স্যুপ, বেথোর শাক, মেথির শাক, টমেটো, গাজর, কাঁচা পিঁয়াজ, পুদিনা, সফেদা, আমলকি, কিছমিছ, আলু বোখারা ও অন্যান্য শাঁস বা ফাইবার যুক্ত খাবার খেলেও পেট পরিষ্কার হয়ে মলত্যাগ হবে।