কিডনিতে পাথর

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

কিডনিতে পাথর কিডনির রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছরই আমাদের দেশে কিডনির পাথর জনিত কারণে অনেকের কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। বিভিন্ন কারণে কিডনিতে এই পাথর হয়ে থাকে। একটু সচেতন হলেই কিডনির পাথর প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কিডনিতে পাথর কি

কিডনির পাথর সাধারণত আকারে ছোট হয়ে থাকে। কিডনির ভিতরে কঠিন পদার্থ (Hard deposits) জমা হয়ে কিডনিতে পাথর হয়। সাধারণত খনিজ এবং অম্ল লবণ (Acid salts) দিয়ে কিডনির পাথর তৈরি হয়। কিডনিতে বিভিন্ন কারণে পাথর হয়ে থাকে। তবে প্রস্রাব গাঢ় (Concentrated) হলে তা খনিজগুলোকে দানা বাঁধতে সহায়তা করে এবং তা পাথরে রূপ নেয়।

কিডনিতে পাথর হয়েছে কি করে বুঝবেন

মূত্রনালীতে পাথর না যাওয়া পর্যন্ত কিডনিতে পাথর হওয়ার কোন লক্ষণ ও উপসর্গ সাধারণত বুঝা যায় না।

কিডনিতে পাথর হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো দেখা দেয়:

  • পিঠে, দুই পাশে এবং পাঁজরের নিচে ব্যথা হওয়া ও তলপেট এবং কুঁচকিতে ব্যথা ছড়িয়ে যাওয়া
  • প্রস্রাব ত্যাগের সময় ব্যথা হওয়া
  • প্রস্রাবের রঙ গোলাপী, লাল অথবা বাদামী হওয়া
  • বারবার প্রস্রাবের বেগ পাওয়া
  • যদি কোন সংক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে জ্বর এবং কাঁপুনী হওয়া
  • বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া

কখন ডাক্তার দেখাবেন

উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

  • এক্স-রে, কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফী (CT)
  • প্রস্রাবের পরীক্ষা
  • রক্তের পরীক্ষা
  • আগে পাথর হয়ে থাকলে সেই পাথরের বিশ্লেষণ (Analysis of Passed Stones)

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

কিডনির পাথরের ধরণ এবং কারণের উপর ভিত্তি করে কিডনির পাথরের চিকিৎসা ভিন্ন হয়ে থাকে ।

আকারে ছোট এবং সামান্য উপসর্গ যুক্ত পাথর:

বেশীরভাগ কিডনি পাথরের ক্ষেত্রে তেমন কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে:

  • প্রতিদিন ১.৯ থেকে ২.৮ লিটার পানি পান
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ঔষধ সেবন

আকারে বড়  হলে এবং উপসর্গ যুক্ত পাথর :

  • শ্বদ তরঙ্গ ব্যবহার করে পাথর ভাঙ্গা/ধ্বংস করা
  • অনেক বড় পাথর অপসারণের জন্য অপারেশন করা
  • ইউরেটেরোস্কোপ (Ureteroscope)ব্যবহার করে পাথর অপসারন করা

কিডনির পাথর কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

  • সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
  • বেশী অক্সালেটযুক্ত খাবার যেমন-পালংশাক, বীট, মিষ্টি আলু, চা, চকোলেট এবং সয়াজাতীয় খাদ্য পরিহার করা
  • খাবারে লবণ কম ব্যবহার করা এবং পরিমাণে অল্প প্রাণীজ আমিষ গ্রহণ করা
  • ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া তবে ক্যালসিয়াম সম্পুরকের ক্ষেত্রে সতর্কতা মেনে চলা

কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ কি ?

প্রস্রাবে বিভিন্ন উপাদান যেমন-তরল, খনিজ এবং অম্লের ভারসাম্যহীনতার কারণে কিডনিতে পাথর হয়।

কিডনিতে কয় ধরণের পাথর হয়ে থাকে?

কিডনির পাথর কয়েক ধরণের হয়। যেমন :

  • ক্যালসিয়াম পাথর (Calcium stones) : বেশিরভাগ কিডনির পাথর ক্যালসিয়াম পাথর। সাধারণত খাদ্য ব্যবস্থা (কিছু কিছু শাক-সবজি, ফলমূল, বাদাম এবং চকলেট উচ্চ মাত্রায় অক্সলেট আছে), উচ্চ মাত্রার ভিটামিন ডি, অন্ত্রের বাইপাস সার্জারি এবং বিভিন্ন ধরণের গ্রহণ বিপাকীয় সমস্যার কারণে প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম ঘণীভূত হয়। ক্যালসিয়াম পাথর অনেক সময় ক্যালসিয়াম ফসফেট আকারেও হয়।
  • স্ট্রুভাইট পাথর (Struvite Stone) : সাধারণত মূত্রাধারে (Urineary tarct) সংক্রমণের কারণে Struvite stone হয়। এগুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বেশ বড় হয়।০
  • ইউরিক এসিড পাথর (Urine Acid Stones) : যাদের পানিশূন্যতা আছে, উচ্চ আমিষযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে এবং গেঁটে বাত (Gout) আছে তাদের এই পাথর হয়। এছাড়া জীনগত কিছু কারণে এবং রক্তের কলায় সমস্যা থাকলেও এই পাথর হয়।
  • সিস্টিন পাথর (Cystine Stone) : সাধারণত বংশগত কোন সমস্যার কারণে এই পাথর হয়। এর ফলে কিডনি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ এমিনো এডিস বের হয়ে যায়।
  • এছাড়া কিডনিতে অন্যান্য ধরণের পাথরও হয়ে থাকে।

কাদের কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে ?

যাদের কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে তারা হলেন :

  • পরিবারের কারো কিডনিতে পাথর হলে অথবা যাদের একবার  কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের
  • চল্লিশ এবং চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের
  • পুরুষদের
  • যাদের পানি কম পান করার কারণে শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দিয়েছে
  • যারা উচ্চ আমিষ, উচ্চ সোডিয়াম এবং উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার খান তাদের
  • স্হূলকায়দের
  • যাদের খাদ্যনালীর রোগ/ শল্য চিকিৎসার কারণে হজম প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয়ে পাথর তৈরীর উপাদান গুলো শরীরে শোষিত হয় তাদের
  • যাদের আগে থেকে কিডনির সমস্যা, যেমন: মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ, সিস্টিন ইউরিয়া ছাড়াও প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অতিক্রিয়া আছে তাদের