অর্শ বা পাইলস রোগের সম্ভাব্য লক্ষন প্রতিকার

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

অর্শ বা পাইলস হলো পায়ুপথে এবং মলাশয়ের নিম্নাংশে অবস্থিত প্রসারিত এবং প্রদাহযুক্ত শিরা। এই অর্শ মলদ্বারের ভেতরেও হতে পারে আবার বাইরেও হতে পারে। সাধারনত দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা গর্ভকালীন সময়ে এই সমস্ত ধমনীর উপর চাপ বেড়ে গেলে পাইলসের সমস্যা দেখা দেয়।

পাইলস বা অর্শ একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। ৫০ বছরের বেশি বয়সী লোকদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই খোসপাঁচড়ার মত চুলকানি এবং রক্তপাত হয় যা থেকে পাইলসের উপস্থিতি আছে বলে ধারনা করা যায়। পাইলসের চিকিৎসায় অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের (কোলোরেক্টাল সার্জন) কাছে যেতে হবে।

পাইলস কেন হয়?

পাইলস কেন হয়? তার সঠিক কারণ জানা সম্ভব না হলেও দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, পানি কম খাওয়া, শাকসব্জী ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার কম খেলে, অতিরিক্ত ওজন, গর্ভাবস্থায়, লিভার সিরোসিস, বৃদ্ধ বয়সে, বেশী চাপ দিয়ে মল ত্যাগ করলে, বেশি মাত্রায় মল নরমকারক ওষুধ ব্যবহার করলে, টয়লেটে বেশী সময় ব্যয় করলে, পরিবারে কারও পাইলস থাকলে, দীর্ঘ সময় বসে থাকলে ইত্যাদি নানান কারনে অর্শ বা পাইলস বেশি হয়ে থাকে।

অর্শ বা পাইলসের লক্ষন ও উপসর্গসমূহ

  • পায়খানার সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হতে পারে।
  • মলদ্বারে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • মলদ্বারের ফোলা বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে আবার নাও পারে। অনেক সময় বের হলে তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। আবার কখনও কখনও বাইরে বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না অথবা প্রবেশ করানো গেলেও তা আবার বেরিয়ে আসে।
  • মলদ্বারের বাইরে ফুলে যায় যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়।
  • পায়ুপথের মুখে চাকার মত হতে পারে।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথা হতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

পায়খানা কালো বা লালচে হলে, পায়খানার সাথে রক্ত আসলে, পায়খানার সময় বা পরে পায়ুপথের মুখে চাকা অনুভব করলে, মলদ্বারে ব্যথা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।

কি কি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে?

  • সম্পূর্ণ মলনালীর পরীক্ষা করার জন্য ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিন বা আঙ্গুল দিয়ে পায়ুপথের পরীক্ষা করতে হতে পারে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজন হলে কলোনোস্কোপী (Colonoscopy) করতে হতে পারে।

অর্শ বা পাইলস রোগে করণীয়

  • প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
  • অত্যাধিক পরিশ্রম করা যাবে না।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসব্জী ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য অর্থাৎ পায়খানা যেন কষা না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
  • নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট অথবা কাছাকাছি সময়ে মলত্যাগ করতে হবে।
  • এমন খাবার গ্রহণ করতে হবে যা সহজে হজম হয়।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা পায়খানার কষাভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
  • অনেকসময় ধরে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা থাকা যাবে না।
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
  • টয়লেটে অধিক সময় ব্যয় করা যাবে না।
  • শরীরের ওজন বেশি হলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • মল ত্যাগের সময় বেশি চাপ দেয়া যাবে না।
  • দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা থাকলে তার চিকিৎসা নিতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া লেকজেটিভ অধিক পরিমানে গ্রহণ করা যাবে না।

অর্শ বা পাইলস রোগে খাবার

শাকসবজি, ফলমূল, দধি, পনির, প্রচুর পানি, ডাল, সালাদ, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পাকা পেঁপে, বেল, আপেল, কমলা, খেজুর, লেবু, টক জাতীয় ফল, মুরগীর মাংস, চাল, আটা, ডিম, মাছ ইত্যাদি খেতে হবে। অপরদিকে খোসাহীন শস্য, চর্বিযুক্ত খাবার, মসৃণ চাল, কলে ছাঁটা আটা, ময়দা, চা, কফি, চীজ, মাখন, চকোলেট, কোমল পানীয়, আইসক্রীম, ভাজা খাবার যেমন- চিপস, পরোটা ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।

অর্শ বা পাইলস রোগের চিকিৎসা

অর্শ বা পাইলসের চিকিৎসা সাধারনত পর্যায়ের ওপর নির্ভর করে করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, পাইলসের চিকিৎসায় কোনও অস্ত্রোপচার লাগে না। বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাইলসের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সাধারনভাবে চারটি পর্যায়ে পাইলসের চিকিৎসা করা হয়। 

প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনও অস্ত্রোপচার লাগে না কিন্তু তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায়ে অস্ত্রোপচার লাগে। কারন- 

তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায়ে জিনিসটি যেহেতু বের হয়ে আসে এটি অস্ত্রোপচার করেই সরাতে হয়। রোগী যদি দেরি না করে তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার ছাড়াই চিকিৎসা করা সম্ভব। পাইলসের আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। 

মলদ্বারের ভিতরের অর্শ বাইরে বেরিয়ে আসে এবং বেরিয়ে আসার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না কিংবা হাত দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করালেও পরে তা আবার বেরিয়ে আসে সেক্ষেত্রে,

  • অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে মলদ্বার না কেটে অর্শ অপারেশন (Longo বা Stapled Haemorrhoidectomy) করা হয় অথবা ডায়াথারমি পদ্ধতি অথবা পুরনো পদ্ধতিতে অর্শ অপারেশন করা হয়।

শেষকথা

আমাদের সবুজ শাকসবজি ও আঁশজাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস করতে হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম দেখা দিলে কিংবা সমস্যায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে। যদি কোনো কারণে মলের সাথে রক্ত দেখা যায় অথবা এ জাতীয় অন্য কোনো সমস্যা দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তাহলে প্রাথমিক অবস্থায়ই রোগটিকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।